কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভাকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মন্ত্রীদের কাজ মনিটরিং করবে এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়মিত রিপোর্ট দেবে। এছাড়াও প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে তাদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হবার পরপরই সব মন্ত্রণালয়ে নির্বাচন ইশতেহার এবং তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের করণীয় সম্পর্কে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় নির্বাচনী ইশতেহার প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের কাজ উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে পাঠানো নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে করণীয়তে ‘দক্ষ’ সেবামূখী এবং জবাবদিহিতা মূলক প্রশাসনের কথা বলা হয়েছে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী ইশতেহার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন,‘ প্রধানমন্ত্রী এবার দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টরারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। এজন্য মন্ত্রণালয়গুলোতে কোন রকম দুর্নীতি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তিনস্তরে নজরদারির মধ্যে আনা হচ্ছে।
প্রথমত, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম প্রথামন্ত্রীর কার্যালয় মনিটরিং করবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকদের মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকরা দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে মহাপরিচালককে জানাবেন। একেকজন মহাপরিচালক একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন। তাঁরা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সচিব, মূখ্য সচিব এবং এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ককে জানাবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, এই ব্যবস্থা আগেও ছিল কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কাজে নজরদারির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ‘শৈথিল্য নীতি’ অনুসরণ করতো। এবার তা হবে না। বিশেষ করে ক্রয় এবং নিয়োগের বিষয়ে কড়া নজরদারি নিশ্চিত করা হবে।
দ্বিতীয়ত এবার জাতীয় সংসদে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কমিটিগুলোকে আরও কার্যকর করা হবে। মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে কঠোর নজরদারি আনবে সংসদীয় কমিটি। সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। এজন্য সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নিয়মিত করা এবং মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের তাতে উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা আসছে।
তৃতীয়ত, মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম দুর্নীতি দমন কমিশনের নেটওয়ার্কে আনা হয়েছে। দুদক এবার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে অনিয়ম এবং দুর্নীতির ব্যাপারে শুরু থেকেই অনুসন্ধান চালাবে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতিগ্রস্থ মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরগুলোতে কমিশন ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা জাল ফেলেছে। আস্তে আস্তে সব মন্ত্রণালয়েই দুর্নীতি দমন কমিশনের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে আসবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ‘সবুজ সংকেত’ও পেয়েছে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, ক্রয়-বিক্রয় এবং নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ হলেই সরকারি কার্যক্রমে অর্ধেকের বেশি দুর্নীতি বন্ধ হবে। এজন্য সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলছে, ত্রিমাত্রিক নজরদারির ফলে মন্ত্রণালয়গুলোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কমবে এবং মন্ত্রীরাও বিতর্কিত হবেন না। প্রধানমন্ত্রী এবার দুর্নীতি প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবেন না, এই বার্তা এখন স্পষ্ট।