বিলুপ্ত পলিক্যাম ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে শিশু মুত্যুর অভিযোগের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আব্দুর রবের ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ডের লঘুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির দুই ফার্মাসিস্ট এবং ম্যানেজারকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার ড্রাগ আদালতের বিচারক সৈয়দ কামাল হোসেন মামলার ২৬ বছর পর এ রায় ঘোষণা করেন।খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির ফার্মাসিষ্ট মাহবুবুল আলম ও মো. দেলোয়ার হোসেন এবং ম্যানেজার এএসএম গোলাম কাদের। খালাসপ্রাপ্ত গোলাম তাদের পলাতক ছিলেন।
দণ্ডিত ও খালাসপ্রাপ্ত অপর ৩ আসামি রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর দণ্ডিত রবের পক্ষে আপিলের শর্তে আইনজীবী জামিনের প্রার্থনা করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।দণ্ডিত এ আসামির ১ বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ের তার আরও ৩ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।রায়ে খালাস ও সাজার বিষয়ে বিচারক উল্লেখ করেছেন, মামলাটি ২৬ বছরের পুরাতন মামলা। মামলায় আসামিরা আগে ১ মাস ১৪ দিন জেলও খেটেছেন। তবে ভেজাল ওষধ উৎপাদন ও বাজারজাত করা জঘন্যতম অপরাধ। এর মাধ্যমে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।
মামলাটিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন অর রশিদও আসামি ছিলেন। কিন্তু তিনি বিচারকালীন মারা যান।রায় ঘোষণার পর আসামি পক্ষের আইনজীবী আনোয়ার জাহিদ ভুইয়া বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর পলিক্যাম ফার্মাসিটিক্যালের যে প্যারাসিটামল জব্দ করেছিল তা ছিল প্রথম প্রডাকশন। যা বাজারজাত হয়নি। তাই ওই ওষুধ কারো সেবন করা সম্ভব ছিল না। তাই শিশু মুত্যুর প্রশ্ন আসে না।এর আগে রিড ফার্মার ভেজাল ওষুধ খেয়ে শিশু মৃত্যুর মামলায় তদন্তে ত্রুটির জন্য একই আদালত থেকে খালাস পেয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমানসহ পাঁচজন। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ওই রায় ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন বিচারক এম আতোয়ার রহমান।
তবে ২০১৪ সালের ২২ জুলাই অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপে ৭৬ শিশুর মৃত্যুর মামলায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. হেলেন পাশাসহ ৩ জনের ১০ বছর করে কারাদন্ডের রায় দিয়েছিলেন আদালত।এ ছাড়া ২০১৫ সালের ১৭ আগষ্ট বিসিআই ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির ভেজাল প্যারাসিটন (প্যারাসিটামল) উৎপাদনের অভিযোগের দুই মামলায় কোম্পানিটির ৬ কর্মকর্তার প্রত্যেক মামলায় ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদন্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
পলিক্যাম ফার্মাসিটিক্যাল ভেজাল প্যারাসিটামলে শিশু মৃত্যুর অভিযোগে ১৯৯২ সালের ১৯ ডিসেম্বর মামলাটি করেন তৎকালীন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবুল খায়ের চৌধুরী।মামলার এজাহারে বলা হয়, দেশের পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয় যে, শেরেবাংলা নগর শিশু হাসপাতালে প্যারাসিটামল সেবনে অনেক শিশুর মুত্যু হয়েছে। ওই খবরের ভিত্তিতে একই বছরের ২৩ নম্বের পলিকেম ফার্মাসিটিক্যালের কামরাঙ্গীচরস্থ কারখানায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে প্যারাসিটালের স্যাম্পুল সংগ্রহ করেন। পরে পরীক্ষায় প্যারাসিটামলের মধ্যে ক্ষতিকর ডাইইথিলিন গ্লাইকল পাওয়ায় মামলাটি দায়ের করা হয়।