স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বিশ্ব ইজতেমার দু’পক্ষের উদ্দেশেই বলেছেন, উস্কানীমূলক কোন প্রকার বক্তব্যই মাঠের বাইরের কোথাও প্রদান করা যাবেনা।
এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেয়া যাবেনা। বিদেশিদের ভিসা যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় আমরা সে ব্যবস্থাও করব। সমজোতা বৈঠকে যাদের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে তাদের প্রতেকেই আসতে পারবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার দুপুরে তাবলীগ জামাতের বিবদমান দু’পক্ষকে একত্রিত করে এক পর্বে অনুষ্ঠিত চারদিন ব্যাপি বিশ্ব ইজতেমার ফলো আপ সভায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা সফল ও সার্থক করতে সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। বিশ্ব ইজতেমায় সরকারের কোন প্রকার হস্তক্ষেপ নেই। ইজতেমা তাদেরই। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আজকে তাদের মধ্যে কিছুটা মতবেদ দেখা গেলেও শীর্ঘ্রই আবারও তারা একত্রে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আপনারা দয়া করে কেউ কারো বিরুদ্ধে উস্কানিমুলক কথা বলবেন না, বয়ানের মধ্যে কিংবা মাঠের মধ্যে কেউ কারো বিরুদ্ধে উস্কানিমুলক কোন কথা থেকে বিরত থাকবেন এজন্য আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি। আমাদের সাদা পোশাকে যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে, কেউ ভুলক্রমে বলে থাকলে আমাদের সাদা পোশাকের কর্মীরা আপনাদের কাছে থেকে আপনাদের রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেবে।
দুপুরে টঙ্গীতে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, জিএমপি কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান,পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম। স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রনালয়ের সচিবসহ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও তাদের প্রতিনিধিরা বিশ্বইজতেমার প্রস্তুতির তথ্য তুলে ধরেন। এতে বিশ^ ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বিরাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন অংশ নেন।
গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠানে ইজতেমাস্থলে ১৩টি গেইট নির্মাণ করা হবে। ইজতেমা মাঠের সহযোগীতায় ১১টি টিম গঠন করা হয়েছে।
পুরো ময়দান মনিটরিংয়ে ৫টি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। থাকছে পুলিশের ১৫টি ও র্যাবের ১০টি ওয়াচ টাওয়ার। ১১টি টিম মাঠের পয়:প্রণালী, বর্জ্য নিষ্কাশন, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে ব্যবস্থাসহ নানা কাজ সম্পন্ন করতে ১১টি টিম গঠন করা হয়েছে। ১৩টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে ১৮ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫৪ লাখ গ্যালন পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মশক নিধনে ৩০টি ফগার মেশিনের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের লোকজন কাজ করবে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবায় ৪৫টি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র খোলা হবে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান জানান, বিশ্ব এজতেমা ময়দান ও এর আশপাশ এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে কোন নাশকতার আশঙ্কা নেই। শান্তিপূর্ণভাবেই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এবারে অন্যান্য যেকোন বারের তুলনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত করা হচ্ছে। র্যাব, বিজিবিসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ কাজ করবে। সিসিটিভি, ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ইজতেমার আয়োজক ও জেলা প্রশাসন বলছে, ইতোমধ্যে ইজতেমার সকল ধরনের প্রস্তুতিকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী এক সংঘষে দুই মুসল্লীর মৃত্যু ও ৫শ’ জন গুরুতর আহত হলে জানুয়ারী মাসের ঘোষিত তারিখের বিশ্ব এজতেমা স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে সরকার প্রধান শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে পুনরায় ইজতেমা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে দু’পক্ষকে একত্রিত করে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারী একটানা ৪ দিনব্যাপী ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানে সমঝোতায় আনা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারী থেকে টানা ৪ দিন ব্যাপী ইজতেমা শুরু হলেও দু’ধাপে দু’পক্ষের নেতৃত্ব থাকছে।
এদিকে, ১০টি শর্ত নিয়ে এবারের ইজতেমায় প্রথম দুই দিন জোবায়ের অনুসারি এবং পরের দুই দিন ওয়াসেকুল ইসলামের (সাদপন্থি) অনুসারিরা অংশ নিচ্ছেন। এবার ৬৪টি জেলার মুসুল্লিদের অংশ গ্রহণে ইজতেমায় দুই বার হচ্ছে আখেরি মোনাজাত।