ডেস্ক: উপলক্ষটা ছিল বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। দিল্লীতে ২৬ মার্চের সেই সন্ধ্যায় চাণক্যপুরীতে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে প্রতিবারের মতো আমন্ত্রিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদ ও সামরিক অ্যাটাশেরা।
সেই ভিভিআইপিদের ভিড়েও নজর এড়ায়নি সোহেল মাহমুদের উপস্থিতি। তার পরিচয়, তিনি ভারতে নিযুক্ত পাকিস্থানের হাই কমিশনার। গত এক বছরেরও কিছু বেশি সময় ধরে মাহমুদ ওই পদে রয়েছেন। খুব শিগগিরই তিনি পাকিস্থানের পররাষ্ট্র সচিব বা সে দেশের শীর্ষ কূটনীতিবিদের দায়িত্ব পাচ্ছেন, এই জল্পনাও প্রবল।
২৬ মার্চ সোহেল মাহমুদ যেভাবে তার মিশনের বিশাল প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন, তাতে অনেকেই অবাক হয়েছেন।
এমনিতে দিল্লীতে পাকিস্থানি কূটনীতিবিদরা যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণ এড়িয়ে চলেন, বিষয়টা অবশ্য তেমনও নয়। যদিও পাকিস্থান ভেঙে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের প্রশ্নটি পাকিস্থানের কাছে আজও একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যু, তার পরেও তাদের কোনও না কোনও প্রতিনিধি সাধারণত বাংলাদেশের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসে থাকেন।
সেটাকে হয়তো প্রতীকী উপস্থিতিই বলা চলে, কিন্তু দিল্লীর চাণক্যপুরীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে পাকিস্থান পুরোপুরি অনুপস্থিত থাকছে, এমনটাও কখনও হয়নি বললেই চলে।
কিন্তু পুরো বিষয়টাকে এবার একটা অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন বর্তমান হাই কমিশনার সোহেল মাহমুদ। দূতাবাসে তার ডেপুটি, পলিটিক্যাল মিনিস্টার, কাউন্সেলর, ফার্স্ট সেক্রেটারিসহ প্রায় ১০/১২ জনের এক বিশাল দল নিয়ে তিনি যখন আমন্ত্রণ রক্ষা করতে আসেন, উপস্থিত অতিথি ভারতীয়রাও রীতিমতো চমকে গিয়েছিলেন।
প্রায় মিনিট চল্লিশ ধরে অনুষ্ঠানে যাবতীয় মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তিনিই। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্থান সংঘাতের রেশ এখনও মেটেনি, তার মধ্যেই পাকিস্থানি রাষ্ট্রদূতকে হাতের কাছে পেয়ে ছেঁকে ধরেছিলেন উপস্থিত ভারতীয় সাংবাদিকরাও।
কিন্তু চমক এখানেই শেষ নয়। অনুষ্ঠানে এসে প্রথমেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর সঙ্গে সম্ভাষণ বিনিময় করেন সোহেল মাহমুদ, তাকে জানান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। কিন্তু এরপর যে অনুরোধটা তিনি করে বসেন, তার জন্য বাংলাদেশের কূটনীতিবিদরাও একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না।
হাই কমিশনার সোহেল মাহমুদ রীতিমত লজ্জা লজ্জা গলায় অনুরোধ করে বলেন, ‘…আর ভালো কথা, আমি শুনেছি— আজ আপনারা অতিথিদের আপ্যায়ন করছেন ঢাকার ফখরুদ্দিনের বিখ্যাত বিরিয়ানী দিয়ে। আজকের অনুষ্ঠানে আমার স্ত্রীর আসার খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু একটা বিশেষ কাজে আটকে যাওয়ায় উনি আসতে পারেননি। যদি উনার জন্য ‘অল্প একটু’ বিরিয়ানী প্যাক করে দেওয়া যায়, তাহলে খুব কৃতজ্ঞ থাকবো!’
বাংলাদেশের আতিথেয়তা জগদ্বিখ্যাত– দিল্লীতে বাংলাদেশ দূতাবাসেরও এ ব্যাপারে খুব সুনাম। পাকিস্থানি রাষ্ট্রদূতের এই আবদারও যথারীতি তারা সঙ্গে সঙ্গে মিটিয়েছেন হাসিমুখেই। রাষ্ট্রদূত চেয়েছিলেন ‘অল্প একটু’, কিন্তু বাংলাদেশ তার পরিবারের জন্য ‘পার্সেল’ করে দিয়েছে বিরিয়ানী-কাবাব-কোর্মার এক বিশাল বাক্স!
তবে পরিমাণটা অবশ্যই তুচ্ছ বিষয়, কিন্তু এই ‘বিরিয়ানী কূটনীতি’র মধ্যে দিয়ে দিল্লীতে পাকিস্থানি রাষ্ট্রদূত যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন একটা বন্ধুত্বের বার্তা দিতে চেয়েছেন, তাতে কোনও সংশয় নেই।
সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যে যে কোনও বিরোধের বিষয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান স্পষ্টতই ভারতের দিকে ঝুঁকে থেকেছে। তা সার্ক বয়কট করাই হোক, কিংবা পুলওয়ামাতে জঙ্গি হামলার নিন্দা, বাংলাদেশ সব সময়ই বলিষ্ঠভাবে ভারতের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছে।
এই পটভূমিতে স্ত্রীর জন্য ঢাকার ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানী চেয়ে নিয়ে সোহেল মাহমুদ পাকিস্থান ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে একটা সহজ, স্বাভাবিক বন্ধুত্বের ছোঁয়া আনতে চেয়েছেন বলেই অনেকে মনে করছেন।
দিল্লীতে বাংলাদেশের দূতাবাসও গত ৪/৫ বছর ধরে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানীর বর্তমান প্রজন্মের কর্ণধারদের উড়িয়ে এনে ভারতীয়দের রসনাতৃপ্তি করাচ্ছেন, দিল্লীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন ঢাকার ওই বিখ্যাত কাচ্চি বিরিয়ানীর।
কিন্তু পাকিস্থান হাত পেতে সেই বিরিয়ানী চেয়েই যে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মেরামতের কাজে ব্যবহার করতে চাইবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল?
- বাংলা ট্রিবিউন
সেই ভিভিআইপিদের ভিড়েও নজর এড়ায়নি সোহেল মাহমুদের উপস্থিতি। তার পরিচয়, তিনি ভারতে নিযুক্ত পাকিস্থানের হাই কমিশনার। গত এক বছরেরও কিছু বেশি সময় ধরে মাহমুদ ওই পদে রয়েছেন। খুব শিগগিরই তিনি পাকিস্থানের পররাষ্ট্র সচিব বা সে দেশের শীর্ষ কূটনীতিবিদের দায়িত্ব পাচ্ছেন, এই জল্পনাও প্রবল।
২৬ মার্চ সোহেল মাহমুদ যেভাবে তার মিশনের বিশাল প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন, তাতে অনেকেই অবাক হয়েছেন।
এমনিতে দিল্লীতে পাকিস্থানি কূটনীতিবিদরা যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণ এড়িয়ে চলেন, বিষয়টা অবশ্য তেমনও নয়। যদিও পাকিস্থান ভেঙে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের প্রশ্নটি পাকিস্থানের কাছে আজও একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যু, তার পরেও তাদের কোনও না কোনও প্রতিনিধি সাধারণত বাংলাদেশের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসে থাকেন।
সেটাকে হয়তো প্রতীকী উপস্থিতিই বলা চলে, কিন্তু দিল্লীর চাণক্যপুরীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে পাকিস্থান পুরোপুরি অনুপস্থিত থাকছে, এমনটাও কখনও হয়নি বললেই চলে।
কিন্তু পুরো বিষয়টাকে এবার একটা অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন বর্তমান হাই কমিশনার সোহেল মাহমুদ। দূতাবাসে তার ডেপুটি, পলিটিক্যাল মিনিস্টার, কাউন্সেলর, ফার্স্ট সেক্রেটারিসহ প্রায় ১০/১২ জনের এক বিশাল দল নিয়ে তিনি যখন আমন্ত্রণ রক্ষা করতে আসেন, উপস্থিত অতিথি ভারতীয়রাও রীতিমতো চমকে গিয়েছিলেন।
প্রায় মিনিট চল্লিশ ধরে অনুষ্ঠানে যাবতীয় মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তিনিই। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্থান সংঘাতের রেশ এখনও মেটেনি, তার মধ্যেই পাকিস্থানি রাষ্ট্রদূতকে হাতের কাছে পেয়ে ছেঁকে ধরেছিলেন উপস্থিত ভারতীয় সাংবাদিকরাও।
কিন্তু চমক এখানেই শেষ নয়। অনুষ্ঠানে এসে প্রথমেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর সঙ্গে সম্ভাষণ বিনিময় করেন সোহেল মাহমুদ, তাকে জানান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। কিন্তু এরপর যে অনুরোধটা তিনি করে বসেন, তার জন্য বাংলাদেশের কূটনীতিবিদরাও একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না।
হাই কমিশনার সোহেল মাহমুদ রীতিমত লজ্জা লজ্জা গলায় অনুরোধ করে বলেন, ‘…আর ভালো কথা, আমি শুনেছি— আজ আপনারা অতিথিদের আপ্যায়ন করছেন ঢাকার ফখরুদ্দিনের বিখ্যাত বিরিয়ানী দিয়ে। আজকের অনুষ্ঠানে আমার স্ত্রীর আসার খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু একটা বিশেষ কাজে আটকে যাওয়ায় উনি আসতে পারেননি। যদি উনার জন্য ‘অল্প একটু’ বিরিয়ানী প্যাক করে দেওয়া যায়, তাহলে খুব কৃতজ্ঞ থাকবো!’
বাংলাদেশের আতিথেয়তা জগদ্বিখ্যাত– দিল্লীতে বাংলাদেশ দূতাবাসেরও এ ব্যাপারে খুব সুনাম। পাকিস্থানি রাষ্ট্রদূতের এই আবদারও যথারীতি তারা সঙ্গে সঙ্গে মিটিয়েছেন হাসিমুখেই। রাষ্ট্রদূত চেয়েছিলেন ‘অল্প একটু’, কিন্তু বাংলাদেশ তার পরিবারের জন্য ‘পার্সেল’ করে দিয়েছে বিরিয়ানী-কাবাব-কোর্মার এক বিশাল বাক্স!
তবে পরিমাণটা অবশ্যই তুচ্ছ বিষয়, কিন্তু এই ‘বিরিয়ানী কূটনীতি’র মধ্যে দিয়ে দিল্লীতে পাকিস্থানি রাষ্ট্রদূত যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন একটা বন্ধুত্বের বার্তা দিতে চেয়েছেন, তাতে কোনও সংশয় নেই।
সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যে যে কোনও বিরোধের বিষয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান স্পষ্টতই ভারতের দিকে ঝুঁকে থেকেছে। তা সার্ক বয়কট করাই হোক, কিংবা পুলওয়ামাতে জঙ্গি হামলার নিন্দা, বাংলাদেশ সব সময়ই বলিষ্ঠভাবে ভারতের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছে।
এই পটভূমিতে স্ত্রীর জন্য ঢাকার ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানী চেয়ে নিয়ে সোহেল মাহমুদ পাকিস্থান ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে একটা সহজ, স্বাভাবিক বন্ধুত্বের ছোঁয়া আনতে চেয়েছেন বলেই অনেকে মনে করছেন।
দিল্লীতে বাংলাদেশের দূতাবাসও গত ৪/৫ বছর ধরে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানীর বর্তমান প্রজন্মের কর্ণধারদের উড়িয়ে এনে ভারতীয়দের রসনাতৃপ্তি করাচ্ছেন, দিল্লীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন ঢাকার ওই বিখ্যাত কাচ্চি বিরিয়ানীর।
কিন্তু পাকিস্থান হাত পেতে সেই বিরিয়ানী চেয়েই যে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মেরামতের কাজে ব্যবহার করতে চাইবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল?
- বাংলা ট্রিবিউন
COMMENTS