১০ মার্চ ব্যাংকে টাকা তোলার নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়, নয়না-বারোটা। শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তাজউদ্দীন আহমদ খবরের কাগজ বা পত্রিকায় বিভিন্ন নির্দেশ দিতে শুরু করেন। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল।
৯ মার্চ মাওলানা ভাসানী পল্টনের জনসভায় বলেছেন, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেয়ে বাংলার নায়ক হওয়া অনেক বেশি গৌরবের।’মওলানা ভাসানীর এই বক্তব্য মুক্তিকামী বাঙালিকে আরো উজ্জ্বীবিত করে। স্বাধীনতা-স্বাধীকার তর্কে যখন একমতে আসতে না পারা মানুষকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান এর মধ্যে নিহিত ছিল। মিছিল, মিটিং, বিক্ষোভ আরো গতিসম্পন্ন হয়ে উঠছিল।
অর্থনৈতিক বৈষম্য, শোষণ, অবিচারের শিকার বাঙালির সামনে তখন মুক্তির পথে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। অসহযোগ আন্দোলনের শুরু থেকে বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র- সব মাধ্যমের শিল্পীরাই আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রেখেছিলেন। তারা গড়ে তুলেছিলেন, ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ’।
স্বাধীনতার মূলমন্ত্র বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতা বারবার প্রচার ও সম্প্রচার হতে থাকে। যা সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধই করেনি, মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শক্তি যুগিয়েছে।
৭ মার্চের বক্তৃতার পর ভুট্টো দাবি করেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে টেলিগ্রাম করেছি’। বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন ‘টেলিগ্রাম পাইনি’।
এ বিষয়ে অভিজ্ঞ মহল বক্তব্য দিয়েছিলেন, ‘ভুট্টো বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য আর একটি অপচেষ্টা করছে।’
অন্যদিকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গুলিতে সংগ্রামী জনতা জীবন দিচ্ছিল। মিছিল, মিটিং, বিক্ষোভ, অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত ছিল।
জানা যায়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর চার দফা দাবি মেনে নিচ্ছেন। ভুট্টোর পিপলস্ পার্টি সেই রকম আভাসই দিয়ে যাচ্ছিল। এই ভাবে বাঙালিকে আশান্বিত করতে করতে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা করে যাচ্ছিলেন ইয়াহিয়া-ভুট্টো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বঙ্গবন্ধুর চারদফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। শিল্পী মুর্তজা বশীর সরকারের তথ্য দফতরের চিত্র প্রদর্শনী বয়কট করেছিলেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অসহযোগ আন্দোলন বেগবান হতে থাকে।
সূত্র: একাত্তরের দিনগুলি: জাহানারা ইমাম। অসহযোগ আন্দোলন একাত্তর: রশীদ হায়দার।
COMMENTS