শহরের খুব কাছে এক বেলার অবকাশে ঘুরে আসা আর খাওয়ার জন্য ‘ছনের ঘর’

ইট-পাথর আর কংক্রিটের শহরের অতি কাছেই রয়েছে বেড়ানো আর খাওয়া-দাওয়ার চমৎকার আয়োজন ‘শনের ঘর’।

গাঁও-গ্রামের নির্মল বাতাসে এক বুক প্রশান্তি নেয়ার মত স্থান ‘শনের ঘর’। সবুজ বন-বনানী, নদী-নালা, খাল-বিল কিংবা পাখপাখালির দৃশ্যে মুগ্ধ হওয়ার মত পরিবেশ যার চারদিকে।

একবেলার অবকাশে ঘুরে আসা আর খাওয়া সেরে নেয়ার জন্য ‘শনের ঘর’ অনেকের কাছেই হতে পারে আদর্শ স্থান। রেস্তোরাঁটি সাজানো হয়েছে প্রকৃতির মতই। প্রতিটি ঘরে ব্যবহার করা হয়েছে শনের ছাউনি। এখানে বসে আড্ডা ও খাওয়ার টেবিল-চেয়ারগুলো বানানো হয়েছে বাঁশ দিয়ে। গ্রামীণ প্রাচীন ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈজসপত্র হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে মাটির তৈরি জিনিস।

পরিবেশ এবং খাবারে রুচির ছাপ রয়েছে। এখানকার খাবারও সুস্বাদু। খাওয়া শেষ করে বাঁশের চেয়ার-টেবিলে বসে দিতে পারেন জমিয়ে আড্ডা।

ঢাকা থেকে সকাল ১০/১১টার দিকে বের হয়ে খেয়ে-দেয়ে সবুজ প্রকৃতি সাথে প্রেম নিবেদন আর গ্রামীণ স্বাদ উপভোগ করে বিকেল ৫/৬ টার মধ্যে আবার ফিরে যাওয়া যায়। তবে ফেরার আগে শনের ঘরে তৈরি এক কাপ লেবুপাতা আর লেবু চা খেয়ে আসবেন। কারণ এই চায়ের অসাধারণ স্বাদ আপনার মনে ভিন্ন আমেজ এনে দিবে।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোড়া গ্রাম। ‘শনের ঘর’ রেস্তোরাঁটি এই পানজোড়া গ্রামেই। এই গ্রামেরই কৃষক আব্দুস সামাদের ছেলে মো. সাদেক মিয়া চলতি বছরের শুরুর দিকে ৫ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শনের ঘর’। কাঞ্চন-গাজীপুর বাইপাস থেকে কালীগঞ্জের দিকে এগুলেই পানজোড়ায় পেয়ে যাবেন ‘শনের ঘর’। আর গুগল ম্যাপ ধরে এগোলেও সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে অথবা যোগাযোগ করতে পারেন-০১৮৭৫৫৯৩২৩৪ নম্বরে।

ভেতরে ঢুকতেই প্রকৃতির বাতাসের ঝাপটায় শীতল হবে শরীর ও মন। উপরে শনের ছাউনি। চারপাশে দেয়াল নেই। দুই চোখজুড়েই থাকবে সবুজের সমারোহ। এ সৌন্দর্য্য উপভোগের। বৃষ্টি হলে তো কোনো কথাই নেই। দু’হাত বাড়িয়ে ছুঁতে পারেন বৃষ্টির শরীরটাও।

শনের ঘরের সত্ত্বাধিকারী সাদেক মিয়া জানান, ব্যক্তি জীবনে তিনি ৩ ছেলের জনক। ছোটবেলায় ছিলেন খুব ডানপিঠে। যে কারণে এসএসসির পর আর লেখাপড়া এগোয়নি। ১৯৯৭ সালে চলে যান ভারতে। সেখানে তিনি বোম্বে (মুম্বাই) গিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ নেন। নিজের দূরন্তপনার কারণে বেশি দিন স্থায়ী হননি। পর্যায়ক্রমে বদল করেন ৪/৫টি রেস্টুরেন্টের কাজ। এভাবে কেটে যায় সাড়ে ৩ বছর। এই সাড়ে ৩ বছরে তিনি বুঝে যান রান্না আসলেই একটি শিল্প এবং তৃপ্তির বিষয়। বোম্বেতে রান্নার কাজে তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না। সেখান থেকে ২০০০ সালের আগস্টে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে। চাকরি নেন সেখানকার শেরাটন হোটেলে। ৫ বছর পর ২০০৫ সালের মে মাসে চলে যান মিশরে। সেখান থেকে এক বছর পর ভারত হয়ে দেশে ফেরেন। কিছুদিন দেশে অবস্থানের পর আবার চলে যান ওমানে। তিনি সেখানকার একটি ৫ তারকা হোটেলে কাজ নেন। তিনি ৩ বছর অবস্থান করেন। পরে ওমানের নামি-দামি আরো কয়েকটি হোটেল ঘুরে অবস্থান নেন ওমান বিমানবন্দরের ৫ তারকা একটি হোটেল। এভাবে প্রায় ২৪ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ফিরে আসেন দেশে।

দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটালেও দেশের মাটি ও মানুষ তাকে খুব টানতো। জীবনের স্বর্ণালী সময়টাই তিনি কাটিয়েছেন প্রবাসে। তবে এবার দেশকে দেবার পালা। দেশে এসেই রাজধানী অভিজাত এলাকা ঢাকার গুলশান-বারিধারার একটি নাম করা হোটেলে চাকরি নেন। সেখানেও মন বসেনি। চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে আসেন শিকড়ের টানে। যেখানে কাঁদা মাটির গন্ধ, সবুজ প্রকৃতি ডাকে। আর এখানেই তার নতুন স্বপ্নের বুনন ‘শনের ঘর’।

সাদেক মিয়া জানান, শুধু দেশি নয় চাইনিজ, থাই, ইতালিয়ান, ফ্রেন্স ও ইন্ডিয়ান যেকোনো খাবার রান্না করতে পারেন তিনি। ‘শনের ঘরে’ একবার যে অতিথি হয়েছেন দ্বিতীয়বার তাকে আসতে হবে, বলেন তিনি।

এখানে প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন রান্না হয়। রান্নায় ব্যবহৃত সবজি স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। স্থানীয় বিভিন্ন চাতালের চাল, জেলে জালে ধরা পড়া বিলের দেশি মাছ ও দেশি মুরগি তার রেস্টুরেন্টের রান্নার মূল উপকরণ। খাবারের দামও রয়েছে সাধ্যের মধ্যে। প্রতিদিন সকাল ১০/১১ টার মধ্যে জানিয়ে দিলে সেই হিসেবে খাবারের আয়োজন করা হয়। তবে কয়েকজনের জন্য বাড়তি খাবারের ব্যবস্থা সবসময়ই থাকে।

রাত যাপনের জন্য শনের ঘরে কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে ভবিষ্যতে ব্যবস্থা করবেন বলে জানান সাদেক মিয়া। এখানে স্থানীয় অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান করতে চান তিনি। এজন্য ভবিষ্যতে এই শনের ঘর নিয়ে রয়েছে তার অনেক পরিকল্পনা।

যেভাবে যাবেন: ঢাকার কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে ৩০০ ফিট রাস্তার শেষ মাথায় পাবেন কাঞ্চন ব্রিজ। আর বাঁয়ে কাঞ্চন-গাজীপুর বাইপাস সড়ক। ওই সড়ক দিয়ে একটু এগোলেই কালীগঞ্জ শহরে যেতে পানজোড়া গ্রামে পেয়ে যাবেন ‘শনের ঘর’। আবার উত্তরা-টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর থেকে বালু নদীর ওপর দিয়ে তেরমুখ ব্রিজ হয়েও যাওয়া যাবে ‘শনের ঘর’।

COMMENTS





নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,234,আন্তর্জাতিক,731,কাপাসিয়া,342,কালিয়াকৈর,417,কালীগঞ্জ,253,খেলা,643,গাজীপুর,3927,চাকরির খবর,33,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2955,টঙ্গী,911,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,136,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,697,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,828,রাজনীতি,1055,লাইফস্টাইল,282,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10745,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: শহরের খুব কাছে এক বেলার অবকাশে ঘুরে আসা আর খাওয়ার জন্য ‘ছনের ঘর’
শহরের খুব কাছে এক বেলার অবকাশে ঘুরে আসা আর খাওয়ার জন্য ‘ছনের ঘর’
https://1.bp.blogspot.com/-R3_UctuegS0/XTx-ksreNFI/AAAAAAAAdJ0/CEY7kx6c4M8FFf6rAB3kB_o49h3Riy7GwCLcBGAs/s1600/shoner%2Bghar%2B7.jpg
https://1.bp.blogspot.com/-R3_UctuegS0/XTx-ksreNFI/AAAAAAAAdJ0/CEY7kx6c4M8FFf6rAB3kB_o49h3Riy7GwCLcBGAs/s72-c/shoner%2Bghar%2B7.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2019/07/chonerghar.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2019/07/chonerghar.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy