ডেস্ক রিপোর্টঃ ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচনের পরপরই সব ধরনের উন্নয়ন কাজ ও ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ আসতে শুরু করে তাদের হাত ধরে। নির্বাচনের বছর পেরিয়ে গেলে শক্ত অবস্থান তৈরি হয় তাদের। ধীরে ধীরে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে ভান্ডারের ক্রয়সংক্রান্ত সব কাজই চলে যায় তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে তারা ঠিকাদারি কাজের ক্ষেত্রে কৌশলের অংশ হিসেবে অন্য বেনামে কাজ নেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এরপর পছন্দমতো কর্মকর্তাদের দায়িত্বে বসিয়ে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও পাকাপোক্ত করেন। এরা হলেন- স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জসিমউদ্দিন সবুজ, যুবলীগ নেতা আমিনুল হক বিপ্লব এবং যুবলীগ নেতা ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন। অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা তিনজনই।
জসিমউদ্দিন সবুজ: অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিএসসিসির নগর ভবনের অন্যতম নিয়ন্ত্রক জসিমউদ্দিন সবুজ মূলত কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মুকিতের লাইসেন্স দিয়ে। ২০১৫ সাল থেকে নগর ভবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত তিনি। ডিএসসিসির বেশিরভাগ খেলার মাঠ, পার্ক, যাত্রী ছাউনি, নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ওয়ার্ড ও ‘কেইস’ প্রকল্পে তিনি কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকার কাজ করছেন।
ডিএসসিসির কর্তকর্তারা জানান, সবুজ ২০১৫ সালের মে মাসে নির্বাচনের পর থেকে ঠিকাদারদের জন্য অর্থ ছাড় থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের বদলিতেও ভূমিকা রাখছেন। সকাল-সন্ধ্যা নগর ভবনে ‘অফিস’ করেন তিনি। একদল যুবক নিয়ে মেয়র সেল থেকে মাঝেমধ্যেই বিভাগীয় প্রধানদের কক্ষে প্রবেশ করে ফাইলে স্বাক্ষর করিয়ে নেন হাতে হাতে। কামরাঙ্গীরচর এলাকার ৫৫ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে সড়ক মেরামতের জন্য ২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার কাজটি তিনি মুকিত ও স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেন। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রায় ৫১ কোটি টাকার চারটি কার্যাদেশ দেওয়া হয় মুন্সীগঞ্জের এক বিএনপি নেতার ‘মেসার্স সোহেল ইঞ্জিনিয়ারিং’ প্রতিষ্ঠানটির নামে।
একই মাসে ৮৪ কোটি টাকার আরেকটি কাজ দেওয়া হয় এ প্রতিষ্ঠানকে। অভিযোগ আছে, এ দুই কাজেই সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী ও সবুজের অংশীদারিত্ব রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, কাজের বিল আদায় করে সেখান থেকে ‘পার্সেন্টেজ’ নেওয়া সবুজের আরেকটি বাণিজ্য। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তি না করলে ঠিকাদাররা বিল পান না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জসিমউদ্দিন সবুজ বলেন, ‘আমি আসলে ছোটখাটো কাজ করি। নুরু ভূঁইয়ার (বিএনপিপন্থি ঠিকাদার ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক নুরু ভূইয়া) সঙ্গে দুটি কাজ করেছি। আর মুকিতের সঙ্গে একটি কাজ করেছি। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তারের মতো কোনো ঘটনা আমি জড়িত থাকি না।’
আমিনুল হক বিপ্লব: ২০১৫ সালে মাঝামাঝি নগর ভবনে আবির্ভাব ঘটে আমিনুল হক বিল্পব নামের একজনের। পুরান ঢাকার বাসিন্দা বিপ্লব বর্তমানে ধানমন্ডিতে বসবাস করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালে নগর ভবনে একটি মোটরসাইকেল করে যাতায়াত করলেও বর্তমানে তিনি কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন। লাইসেন্স করা অস্ত্রও রাখেন সবসময়। মেয়র সেল থেকে শুরু করে সব দপ্তরে বিপ্লবের দাপট চোখে পড়ার মতো। ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগে অল্প টাকার মালামাল সরবরাহ করা বিপ্লব এখন কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকার কাজ করছেন।
উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত বিএনপিপন্থি পারভেজের লাইসেন্স দিয়ে মূলত কাজ করেন বিপ্লব। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ডিএসসিসির ৩৬ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসের জন্য আসবাবপত্র কেনাকাটা নিয়ে হট্টগোলে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর পেশিশক্তি দেখিয়ে ২০১৬ সালে অক্টোবরে মহানগর ফিলিং স্টেশনের দখল নেন। সেখানে ডিএসসিসির যানবাহনে জ্বালানি সরবরাহের নামে বিপ্লব প্রতি মাসে নেন প্রায় ৩ কোটি টাকা। বর্তমানে বিপ্লব চারটি খেলার মাঠ ও পার্কের উন্নয়ন কাজসহ নতুন ওয়ার্ডে কোটি কোটি টাকার কাজ করছেন।
জানতে চাইলে আমিনুল হক বিপ্লব বলেন, ‘আমি চারটি পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নে কাজ করছি। সেখানে নিয়ম মেনেই কাজ পেয়েছি। কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি সঠিক নয়। মহানগর ফিলিং স্টেশনের কাজটি আমাদের তত্ত্বাবধানে চলে। সেটিও দাপ্তরিক নিয়মনীতি মেনে আমরা পেয়েছি।’
ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন: ২০১৫ সালে ডিএসসিসির নির্বাচন হওয়ার পর নগর ভবনে দরপত্রে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন রতন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একপর্যায়ে নগর ভবনের পাশে টেলিফোন ভবন চত্বরে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এ কাউন্সিলর নিজের শক্তির জানান দিতে ডিএসসিসির দুই কর্মকর্তাকে মারধর করেন। এ ঘটনার পর ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান পোক্ত করে নেন তিনি। দুয়েক দিন পরপর নগর ভবনে একাধিক দেহরক্ষী সঙ্গে নিয়ে মহড়া দেন। নিজ জেলার বাসিন্দা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ‘দি বিল্ডার্স লিমিটেড’-এর মালিক স্বপনের প্রতিষ্ঠানের নামে একে একে ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন রতন। বর্তমানে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকার কাজ চলছে তার। চার ইউনিয়ন প্রকল্পে চারটি সেতুর কাজ করছেন তিনি। এ কাউন্সিলর বেশি সমালোচনায় এসেছেন সেগুনবাগিচায় ডিএসসিসিরি একটি পাঁচতলা ভবনের তিনটি ফ্লোর দখলে রেখে। গত চার বছরের বেশি সময় ডিএসসিসি এ ভবনে দখলে যেতে পারেনি।
ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান, রতন চাঁনখারপুল মোড়ে ডিএসসিসির একটি মার্কেট নির্মাণে বেনামে কাজ নেন ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর। দুই বছর মেয়াদে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ১ অক্টোবরে। কিন্তু এ কাজের বিপরীতে শুধু পাইলিং আর কয়েকটি পিলারের রড বেঁধে প্রায় ৮ কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছেন রতন। এদিকে ওই মার্কেটের দোকান বরাদ্দের নামে ডিএসসিসি শত শত মানুষের টাকা নিয়েছে। মার্কেটটির নির্মাণ কবে শেষ হবে তা জানা যায়নি।
একই অবস্থা ওসমানী উদ্যানের ‘গোস্বা নিবারণী’ পার্কের। পুুরান ঢাকার ফুসফুসখ্যাত এ পার্কটি গত দুই বছর ধরে উন্নয়নের নামে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। কয়েক দফা ব্যয় বাড়িয়ে এ প্রকল্পের খরচ এখন ধরা হয়েছে শতকোটি টাকার ওপরে। এ পার্কের কাজটিও কাউন্সিলর রতন দি বিল্ডার্সের নামে নিয়েছেন। তিনি তার নিজ এলাকায় ফুটপাতের ওপর একটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে বেশ সমালোচনায় পড়েন।
সেগুনবাগিচায় অ্যাগোরা সুপার শপের উল্টো পাশে ফুটপাতের ওপর করা ওই স্থাপনায় বর্তমানে একটি গ্যারেজ ও মনোহারি দোকান রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ফরিদউদ্দিন রতন বলেন, আইনগতভাবেই আমি কাউন্সিলর হিসেবে সিটি করপোরেশনে কাজ করতে পারি না।
স্বপনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তবে তার প্রতিষ্ঠানে আমার কাজ করার বিষয়টি সঠিক নয়। আমি বিদ্যুতের হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ করি। নগর ভবনে কোনো সময় দেহরক্ষী নিয়ে যাইনি।’ আপনাকে বেশ কয়েকবার একাধিক দেহরক্ষী নিয়ে নগর ভবনে কর্মকর্তাদের রুমে যেতে দেখা গেছে এমন তথ্য জানালে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
আরও যারা টেন্ডারে জড়িত: বিএনপিপন্থি ঠিকাদার জি কে এন্টারপ্রাইজের মালিক গোফরান, ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক নুরু ভূঁইয়া, নগর ভবনের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তির নিকটাত্মীয় অপু, সাদেক হোসেন খোকার ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে পরিচিত আবুল অ্যান্ড ব্রাদার্সের আবুল হোসেন, গ্রেপ্তারকৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা সরকার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা তাপস কুন্ডু, ইউনাইটেড কমার্শিয়ালের মালিক খসরু এবং ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগের মো. হালিম। এছাড়া মহসিন আলী মাখন নামে এক ঠিকাদারও নগর ভবনে দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এরপর পছন্দমতো কর্মকর্তাদের দায়িত্বে বসিয়ে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও পাকাপোক্ত করেন। এরা হলেন- স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জসিমউদ্দিন সবুজ, যুবলীগ নেতা আমিনুল হক বিপ্লব এবং যুবলীগ নেতা ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন। অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা তিনজনই।
জসিমউদ্দিন সবুজ: অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিএসসিসির নগর ভবনের অন্যতম নিয়ন্ত্রক জসিমউদ্দিন সবুজ মূলত কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মুকিতের লাইসেন্স দিয়ে। ২০১৫ সাল থেকে নগর ভবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত তিনি। ডিএসসিসির বেশিরভাগ খেলার মাঠ, পার্ক, যাত্রী ছাউনি, নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ওয়ার্ড ও ‘কেইস’ প্রকল্পে তিনি কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকার কাজ করছেন।
ডিএসসিসির কর্তকর্তারা জানান, সবুজ ২০১৫ সালের মে মাসে নির্বাচনের পর থেকে ঠিকাদারদের জন্য অর্থ ছাড় থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের বদলিতেও ভূমিকা রাখছেন। সকাল-সন্ধ্যা নগর ভবনে ‘অফিস’ করেন তিনি। একদল যুবক নিয়ে মেয়র সেল থেকে মাঝেমধ্যেই বিভাগীয় প্রধানদের কক্ষে প্রবেশ করে ফাইলে স্বাক্ষর করিয়ে নেন হাতে হাতে। কামরাঙ্গীরচর এলাকার ৫৫ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে সড়ক মেরামতের জন্য ২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার কাজটি তিনি মুকিত ও স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেন। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রায় ৫১ কোটি টাকার চারটি কার্যাদেশ দেওয়া হয় মুন্সীগঞ্জের এক বিএনপি নেতার ‘মেসার্স সোহেল ইঞ্জিনিয়ারিং’ প্রতিষ্ঠানটির নামে।
একই মাসে ৮৪ কোটি টাকার আরেকটি কাজ দেওয়া হয় এ প্রতিষ্ঠানকে। অভিযোগ আছে, এ দুই কাজেই সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী ও সবুজের অংশীদারিত্ব রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, কাজের বিল আদায় করে সেখান থেকে ‘পার্সেন্টেজ’ নেওয়া সবুজের আরেকটি বাণিজ্য। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তি না করলে ঠিকাদাররা বিল পান না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জসিমউদ্দিন সবুজ বলেন, ‘আমি আসলে ছোটখাটো কাজ করি। নুরু ভূঁইয়ার (বিএনপিপন্থি ঠিকাদার ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক নুরু ভূইয়া) সঙ্গে দুটি কাজ করেছি। আর মুকিতের সঙ্গে একটি কাজ করেছি। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তারের মতো কোনো ঘটনা আমি জড়িত থাকি না।’
আমিনুল হক বিপ্লব: ২০১৫ সালে মাঝামাঝি নগর ভবনে আবির্ভাব ঘটে আমিনুল হক বিল্পব নামের একজনের। পুরান ঢাকার বাসিন্দা বিপ্লব বর্তমানে ধানমন্ডিতে বসবাস করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালে নগর ভবনে একটি মোটরসাইকেল করে যাতায়াত করলেও বর্তমানে তিনি কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন। লাইসেন্স করা অস্ত্রও রাখেন সবসময়। মেয়র সেল থেকে শুরু করে সব দপ্তরে বিপ্লবের দাপট চোখে পড়ার মতো। ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগে অল্প টাকার মালামাল সরবরাহ করা বিপ্লব এখন কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকার কাজ করছেন।
উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত বিএনপিপন্থি পারভেজের লাইসেন্স দিয়ে মূলত কাজ করেন বিপ্লব। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ডিএসসিসির ৩৬ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসের জন্য আসবাবপত্র কেনাকাটা নিয়ে হট্টগোলে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর পেশিশক্তি দেখিয়ে ২০১৬ সালে অক্টোবরে মহানগর ফিলিং স্টেশনের দখল নেন। সেখানে ডিএসসিসির যানবাহনে জ্বালানি সরবরাহের নামে বিপ্লব প্রতি মাসে নেন প্রায় ৩ কোটি টাকা। বর্তমানে বিপ্লব চারটি খেলার মাঠ ও পার্কের উন্নয়ন কাজসহ নতুন ওয়ার্ডে কোটি কোটি টাকার কাজ করছেন।
জানতে চাইলে আমিনুল হক বিপ্লব বলেন, ‘আমি চারটি পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নে কাজ করছি। সেখানে নিয়ম মেনেই কাজ পেয়েছি। কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি সঠিক নয়। মহানগর ফিলিং স্টেশনের কাজটি আমাদের তত্ত্বাবধানে চলে। সেটিও দাপ্তরিক নিয়মনীতি মেনে আমরা পেয়েছি।’
ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন: ২০১৫ সালে ডিএসসিসির নির্বাচন হওয়ার পর নগর ভবনে দরপত্রে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন রতন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একপর্যায়ে নগর ভবনের পাশে টেলিফোন ভবন চত্বরে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এ কাউন্সিলর নিজের শক্তির জানান দিতে ডিএসসিসির দুই কর্মকর্তাকে মারধর করেন। এ ঘটনার পর ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান পোক্ত করে নেন তিনি। দুয়েক দিন পরপর নগর ভবনে একাধিক দেহরক্ষী সঙ্গে নিয়ে মহড়া দেন। নিজ জেলার বাসিন্দা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ‘দি বিল্ডার্স লিমিটেড’-এর মালিক স্বপনের প্রতিষ্ঠানের নামে একে একে ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন রতন। বর্তমানে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকার কাজ চলছে তার। চার ইউনিয়ন প্রকল্পে চারটি সেতুর কাজ করছেন তিনি। এ কাউন্সিলর বেশি সমালোচনায় এসেছেন সেগুনবাগিচায় ডিএসসিসিরি একটি পাঁচতলা ভবনের তিনটি ফ্লোর দখলে রেখে। গত চার বছরের বেশি সময় ডিএসসিসি এ ভবনে দখলে যেতে পারেনি।
ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান, রতন চাঁনখারপুল মোড়ে ডিএসসিসির একটি মার্কেট নির্মাণে বেনামে কাজ নেন ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর। দুই বছর মেয়াদে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ১ অক্টোবরে। কিন্তু এ কাজের বিপরীতে শুধু পাইলিং আর কয়েকটি পিলারের রড বেঁধে প্রায় ৮ কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছেন রতন। এদিকে ওই মার্কেটের দোকান বরাদ্দের নামে ডিএসসিসি শত শত মানুষের টাকা নিয়েছে। মার্কেটটির নির্মাণ কবে শেষ হবে তা জানা যায়নি।
একই অবস্থা ওসমানী উদ্যানের ‘গোস্বা নিবারণী’ পার্কের। পুুরান ঢাকার ফুসফুসখ্যাত এ পার্কটি গত দুই বছর ধরে উন্নয়নের নামে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। কয়েক দফা ব্যয় বাড়িয়ে এ প্রকল্পের খরচ এখন ধরা হয়েছে শতকোটি টাকার ওপরে। এ পার্কের কাজটিও কাউন্সিলর রতন দি বিল্ডার্সের নামে নিয়েছেন। তিনি তার নিজ এলাকায় ফুটপাতের ওপর একটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে বেশ সমালোচনায় পড়েন।
সেগুনবাগিচায় অ্যাগোরা সুপার শপের উল্টো পাশে ফুটপাতের ওপর করা ওই স্থাপনায় বর্তমানে একটি গ্যারেজ ও মনোহারি দোকান রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ফরিদউদ্দিন রতন বলেন, আইনগতভাবেই আমি কাউন্সিলর হিসেবে সিটি করপোরেশনে কাজ করতে পারি না।
স্বপনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তবে তার প্রতিষ্ঠানে আমার কাজ করার বিষয়টি সঠিক নয়। আমি বিদ্যুতের হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ করি। নগর ভবনে কোনো সময় দেহরক্ষী নিয়ে যাইনি।’ আপনাকে বেশ কয়েকবার একাধিক দেহরক্ষী নিয়ে নগর ভবনে কর্মকর্তাদের রুমে যেতে দেখা গেছে এমন তথ্য জানালে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
আরও যারা টেন্ডারে জড়িত: বিএনপিপন্থি ঠিকাদার জি কে এন্টারপ্রাইজের মালিক গোফরান, ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক নুরু ভূঁইয়া, নগর ভবনের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তির নিকটাত্মীয় অপু, সাদেক হোসেন খোকার ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে পরিচিত আবুল অ্যান্ড ব্রাদার্সের আবুল হোসেন, গ্রেপ্তারকৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা সরকার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা তাপস কুন্ডু, ইউনাইটেড কমার্শিয়ালের মালিক খসরু এবং ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগের মো. হালিম। এছাড়া মহসিন আলী মাখন নামে এক ঠিকাদারও নগর ভবনে দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
COMMENTS