২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছে বর্তমান সরকার। আজ ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি। ইতিমধ্যে বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। দায়িত্বের প্রথম বছরে কেমন করলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি?
দায়িত্বের এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর নিজের কার্যক্রম নিয়ে প্রতিমন্ত্রী একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাগো নিউজকে। সচিবালয়স্থ নিজ কার্যালয়ে দেয়া সাক্ষাৎকারের চৌম্বক অংশ গাজীপুর অনলাইনের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো।
জাগো নিউজ : ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এক বছর পূরণ করলেন। দায়িত্ব নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন। আগামীর জন্য কি কি কর্মপন্থা ঠিক করেছেন?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : ২০১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর আমরা চেষ্টা করেছি ক্রীড়াঙ্গনকে আরোা ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে। প্রথম বছরটায় আমরা সেভাবেই করতে পেরেছি। বিগত বছরে আমাদের অনেক অর্জন ছিল। দু’একটা জায়গায় হয়তো সফল হইনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের সফলতা ছিল।
জাগো নিউজ : প্রথম বছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কি কি কাজ করেছে, যা নিয়ে আপনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আমি দায়িত্বের শুরুর দিক থেকেই বলি। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল গোল্ডকাপ সফলভাবে আয়োজন করেছি। প্রথমবারের মতো বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ গোল্ডকাপ আয়োজন করেছি। প্রথমবারের মতো ১০টি ডিসিপ্লিনে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নশিপ আমরা আয়োজন করেছি। আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের। এ বছর সেটার কাজ শুরু হবে।
জাগো নিউজ : প্রথম বছরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি ছিল?
ক্রীড়া প্রতিন্ত্রী : সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এসএ গেমস। কারণ, কয়েকবার গেমসের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। তাই আমাদের প্রস্তুতি ব্যহত হয়েছে। তারপরও হাল ছেড়ে দেইনি। চেষ্টা চালিয়ে গেছি। তার ফলাফল অতীতের চেয়ে ভালো করেছি, বেশি স্বর্ণ পেয়েছি।
জাগো নিউজ : যে কোনো দেশই খেলাধুলার উন্নয়নে বন্ধুপ্রতীম অনেক দেশের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে। আপনার সরকারের এমন কোনো উদ্যোগ ছিল কি না?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : দায়িত্বের প্রথম বছরে অনেকগুলো দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছি। এর মধ্যে ভারত, ব্রুনাই এবং জাতীসংঘের যে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্স, তাদের সঙ্গে আমরা সমঝোতা সাক্ষর করেছি। এভাবে ব্রাজিল ও ইউরোপের কিছু দেশের সঙ্গেও সাক্ষর করতে চাই। কাজও শুরু করে দিয়েছি এ নিয়ে।
জাগো নিউজ : তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলায় আকৃষ্ট করতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি না?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : দেখুন, স্বীকৃতি পেলে সবাই নিজনিজ ক্ষেত্রে আরো ভালো করতে উৎসাহী হয়। যে কারণে, আমরা প্রথমবারের মতো শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পদক প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা অনেক সম্মানী ভাতার ব্যবস্থাও করেছি। স্পোর্টসের সাথে সম্পৃক্ত অস্বচ্ছলদেরও আমরা সম্মানী ভাতা দেবো। ইতিমধ্যে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। দেশের প্রত্যেক জেলা পরিষদে চিঠি পাঠিয়েছি।
জাগো নিউজ : খেলাধুলার উন্নয়নে অবকাঠামো তৈরি বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই এক বছরে আপনি এ বিষয়ে বড় কোনো উদ্যোাগ নিতে পেরেছেন কি?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আপনারা জানেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কক্সবাজারে একটি ফুটবল ও ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কার্যক্রমও শুরু করেছি। এ ছাড়া একটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স করতে যাচ্ছি। বিশাল এরিয়া নিয়ে ক্রীড়া স্থাপনা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সেখানে প্রতিটি খেলা যাতে প্র্যাকটিস করতে পারে সে ব্যবস্থা থাকবে এবং অংশ গ্রহণ করতে পারে।
ইতিমধ্যে আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর এবং মাদারীপুরের শিবচরে এ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জরিপ কাজ শুরুর অনুমতিও দেয়া হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়ামকে আধুনিক করার উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে যে স্টেডিয়ামগুলোর অবস্থা ভালো নয়, সেগুলো ভালো করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা আরো একটা উদ্যোগ নিয়েছি। সারাদেশে যে মাঠগুলো আছে সেগুলোকে সংস্কার করে খেলার উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।
জাগো নিউজ : শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের প্রতিটি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সে প্রকল্পের কি অবস্থা?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : এ বছর ১৩৭ টি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। ডিবিবি প্রস্তুত সম্মন্ন হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম আধুনিকায়নের জন্য বড় ধরনের সংস্কার করা হচ্ছে। অ্যাথলেটিক ট্র্যাক ও ফুটবল খেলার মাঠ অনুপযুক্ত। এক মাঠে কয়েক রকম ঘাস। মাঠের মাটি উঠিয়ে নতুন করে করা হবে।
পুরো স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে শেড নির্মাণ ও নতুন চেয়ার করে দিচ্ছি। জায়ান্ট স্ক্রিন ও ফ্লাডলাইটসহ বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। জাতীয় পিতার নামে স্টেডিয়াম। সেটা মাথায় রেখেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি।
জাগো নিউজ : এর পাশাপাশি অন্য কোনো ক্রীড়া স্থাপনা তৈরি বা সংস্কার করা হয়েছে?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : কমলাপুর ফুটবল স্টেডিয়াম, সুলতানা কামালা মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে সুইমিং পুল বা সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছি। যেসব জেলায় ইনডোর স্টেডিয়াম নেই সেখানে এগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এ বছর আমরা ২১টি ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে ছিল প্রতিবন্ধীদের জন্য একটা খেলার মাঠ করে দেয়া। এ কারণে সংসদ ভবনের পাশে প্রতিবন্ধীদের জন্য মাঠ নির্মাণের জন্য নকশা চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে।
রাজশাহীতে নতুন একটা বিকেএসপি তৈরি করছি। সেখানে শহরের একটু বাইরের জায়গা অধিগ্রহণওসহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহেও একটি বিকেএসপি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জাগো নিউজ : দেশের ফুটবল নিয়ে কি ভাবছেন? বর্তমান সরকার তো ফুটবলের জন্য আলাদা বরাদ্দ রেখেছে বাজেটে। এটা নিয়ে কি বলবেন?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আপনারা জানেন, সরকার বাজেটে ২০ কোটি টাকা ফুটবলের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রেখেছে। এটা কিন্তু প্রথমবারের মতো ঘটনা দেশে। এর আগে কোনো খেলার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়নি বাজেটে।
জাগো নিউজ : এ বছর তো ফুটবলের নির্বাচন। দেশের অন্যতম প্রধান নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আমরা চাই, ফুটবল স্বাভাবিক গতিতে চলুক। ফুটবলে কিছু রুলস রয়েছে। ফিফা কর্তৃক তাদের কিছু আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। সেটা অবশ্যইা তারা মেনে চলবেন। পাশপাশি সরকারের যে আইনগত বিষয়গুলো আছে সেগুলোও তারা সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করবেন।
এখানে কে বিজয়ী হলেন আর কে পরাজিত হলেন সেটা আমাদের বিষয় না। আমরা চাই, সঠিক ব্যক্তিরাই নেতৃত্বে থাকুক। তাতে আমাদের ফুটবলের জন্যই ভালো হবে। আমরা চাই, ফুটবল আরো এগিয়ে যাক। র্যাংকিংয়ে অবস্থান আরো ভালো হোক। আপনারা দেখছেন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ফুটবল ভালো একটা অবস্থানে চলে যাবে।
জাগো নিউজ : আপনি শুরুতেই বলছিলেন এসএ গেমসে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রথম বছরে। গেমসের পর আপনার মূল্যায়ন কি?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : এসএ গেমসে ভালো করেছে এমন ফেডারেশনগুলোর জন্য আলাদা করে ১ কোটি টাকার ওপরে বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এটা হবে স্পেশাল বরাদ্দ। আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তারপরও আমরা এসএ গেমসে ভালো করেছি। যদিও কয়েকটি ডিসিপ্লিনে আরো প্রত্যাশা ছিল। বিশেষ করে শ্যুটিং, সুইমিং, ফুটবল, অ্যাথলেটিকস। এগুলোতে যদি সফল হতাম তাহলে আমাদের পূর্ণতা আসতো।
যে সব খেলায় খারাপ হলো সেগুলো নিয়ে বসে আমাদের ফাইন্ড আউট করতে হবে, কেন খারাপ হলো। আমরা মনে করি যে, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
জাগো নিউজ : আমরা যে ১৯ স্বর্ণ পেয়েছি তার মধ্যে একটা মাত্র স্বর্ণ ভারত-পাকিস্তানকে হারিয়ে। সেটা জিতেছেন ফেন্সিংয়ে ফাতেমা মুজিব। ভারত ও পাকিস্তান সব খেলায় অংশ নিলে আমাদের স্বর্ণতো আরো কম হতো তাই না?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: হয়তো কমতো। সেটা অন্য বিষয়। এর আগের আসরে আমরা চারটি স্বর্ণ পেয়েছিলাম। এবার কমলেও তার চেয়ে বেশি থাকতো।
জাগো নিউজ : সাঁতার, শুটিং, ফুটবলসহ কিছু জনপ্রিয় ডিসিপ্লিনে আমরা স্বর্ণ পাইনি। সেটা ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন কিনা?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : শুটিং ও সাঁতারের স্বর্ণ আমরা ধরে রাখতে পারিনি। ভারোত্তোলনে পেরেছি। আমার কাছে কষ্ট লেগেছে শুটিংয়ের পারফরম্যান্সে। যে ডিসিপ্লিন সব সময় আমাদের কিছু না কিছু উপহার দিতো। সুইমিংও আমাদের উপহার দিতো। এগুলোর ব্যর্থতা আমাকে পীড়া দেয়। এ খেলাগুলোয় আমরা বেশি অর্থ খরচ করি। এগুলোতে যদি সফল হতাম, তাহলে পরিপূর্ণতাটা বেশি হতো।
তবে আমরা যদি প্রশিক্ষণটা আরো বেশি নিতে পারতাম, তাহলে আরো ভালো ফলাফল হতো। নেপাল বারবার গেমস পিছিয়েছে। একটা সময় মনে হয়েছে যে, তারা বুঝি গেমস করতেই পারবে না। আমাদের ক্রীড়াবিদদের মধ্যেও ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছিল। বারবার বাধাগ্রস্থ না হলে স্বর্ণ আরো বাড়তো।
জাগো নিউজ : ওআইসিভুক্ত দেশগুলো ঢাকাকে ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে অর্জনটা কত বড়?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : ওআইসিভুক্ত যে দেশগুলো আছে তারা প্রতি বছর একটি শহরকে ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণা করে। আমরা কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেছিলাম ঢাকাকে ওআইসির ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণার জন্য। ওআইসি ইয়ুথ বিভাগের প্রধানকে ঢাকায় এনেছিলাম। তিনি সব কিছু দেখে খুশি হয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন। গত ২৫ ডিসেম্বর ওআইসি ঢাকাকে ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণা করে। এটা আমাদের বড় এক অর্জন।
জাগো নিউজ : মুজিববর্ষে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কি কি করছে?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : ২০২০ সালটি মুজিববর্ষ। মুজিববর্ষকে জাঁকজমকভাবে পালন করা হবে। ইতিমধ্যে ২৬০টির মতো কর্মসূচি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় কমিটি। সেখানে খেলাধুলারই আছে ১০০’র মতো ইভেন্ট। তার মানে সারা দেশ যা করছে তার চেয়ে বেশি করছে আমাদের এই মন্ত্রণালয়। সবকিছু ঠিকঠাক মতো বাস্তবায়ন করতে চাইলে মুজিববর্ষ হবে ক্রীড়াঙ্গনের বর্ষ।
জাগো নিউজ : মুজিববর্ষে কি কি চমক থাকতে পারে খেলাধুলায়?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : মুজিববর্ষে সবচেয়ে বড় চমক থাকবে ফুটবল এবং ক্রিকেটে। কারণ, এ ইভেন্ট দুটি ঘিরে কিছু লিজেন্ড আনার চেষ্টা চলছে। তারা যদি আসতে পারেন এবং তাদের ফ্যানদের ভালোবাস তৈরি হবে ফুটবল ও ক্রিকেটের ওপর। এখন পর্যন্ত যে আলোচনা হয়েছে, তাতে ম্যারাডোনার আশার সম্ভাবনাই বেশি। এ ছাড়া পেলেকে নিয়েও কাজ করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। তারাও হয়তো পেলেকে আনার চিন্তা করছে। এর পাশপাশি আরো কিছু চিন্তা আছে। সেটা অর্থের ওপর নির্ভর করছে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাসহ বড় বড় দেশের জার্সি গায়ে ওয়ার্ল্ড কাপ মাতিয়েছেন এমন কিছু সুপারস্টার আনার চেষ্টাও চলছে।
জাগো নিউজ : দায়িত্ব নেয়ার শুরুতে ফেডারেশনগুলোর ঝুলে থাকা নির্বাচন শুরু করেছিলেন। কয়েকটি করার পর থেমে গেলেন কেন?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : ফেডাশেনের নির্বাচন থেকে পেছনে সরতে হয়েছিল অন্য কারণে। এসএ গেমসটা সামনে ছিল। এ সময় নির্বাচন করে ঝামেলা পাকিয়ে ফেললে গেমসের প্রস্তুতি ক্ষতিগ্রস্থ হতো। এ কারণ আমরা ভেবেছি একটু স্লো গেলে ভালো। প্রথম দিকে যেভাবে শুরু করেছিলাম সেভাবে চালিয়ে গেলে আরো কিছু ফেডারেশনের নির্বাচন হয়ে যেতো।
গেমস শেষ হয়েছে। এখন আমরা ফেডারেশনগুলোকে চিঠি দেবো নির্বাচনের বিষয়ে। যারা যারা নির্বাচন করেনি। আমি মনে করি, ক্রীড়াঙ্গনের বিষফোঁড়া ফেডারেশনের অনির্বাচিত কমিটিগুলোকে। যাতে দ্রুত নির্বাচন হয় তার কার্যক্রম শুরু করবো।
জাগো নিউজ : দেশের প্রধান ক্রীড়া ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম; কিন্তু এ স্টেডিয়ামের পরিবেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আপনাকে পীড়া দেয় না?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আগে ঢাকায় আকষর্ণীয় জায়গা কম ছিল। হাতেগোনা যে কয়টি দর্শণীয় স্থাপনা ছিল তার মধ্যে এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম অন্যতম। এই এলাকা ঘিরে একটা পরিবেশও ছিল দারুণ। ২৪ তলা ভবন, হকি স্টেডিয়াম। একটা নান্দনিক সৌন্দর্য্য ছিল।
এ সৌন্দর্য্যটা ধাপেধাপে, বছর বছরে নষ্ট হয়েছে। দোকানগুলোর অত্যাচারে এসব হয়েছে। যখন যারা এসেছে তখন তারাই কিছু না কিছু নতুন দোকান বসিয়েছে। টয়লেট ভেঙ্গে দোকান বানিয়েছে, গেট ভেঙ্গে দোকান বানিয়েছে। খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুম ভেঙ্গেও দোকান বসিয়েছে। শুধু ব্যবসার দিকে চিন্তা ছিল। যার কারণে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের এই চেহারায় পরিণত হয়েছে।
আমার কাছে মনে হয়, সময় এসেছে এটাকে নতুন করে তৈরি করার। যদি ভেঙ্গে নতুন করে করতে পারি তখন আমরা আমাদের মনের মতো করে দোকানপাট বাদ দিয়ে স্টেডিয়ামকে স্টেডিয়ামের মতো করেই তৈরি করতে পারবো। বিশ্বে যে রকম দেখতে পাই। কোথায় স্টেডিয়ামের ভেতরে এমন দোকান থাকে না।
জাগো নিউজ : সেটা আমাদের দেশের মানুষ কবে নাগাদ দেখতে পারবেন? আবার তো সংস্কার করছেন প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে।
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : সংস্কার করছি। কারণ, স্টেডিয়ামের যে অবস্থা তাকে এখানে তো কোনো আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজন সম্ভব না। কিছুই নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা দিয়েছেন। ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করা সময় সাপেক্ষ ব্যপার।
জাগো নিউজ : সব কিছু মিলিয়ে কেমন কাটলো ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বছর?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : নিজের কাজে আমি খুবই সন্তুষ্ট। সাকিবের আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়াসহ ২/১টা ঘটনা বাদ দিলে দেখবেন এক বছরে আমাদের অনেক অর্জন আছে। দেখেন, আরচারিতে রোমান সানা সরাসরি অলিম্পিক খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। দাবায় ফাহাদ রহমান প্রথমবারের মতো ওয়ার্ল্ডকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে এই বয়সে। তাই আমি মনে করি, এক বছরে সফল হয়েছি ইনশাল্লাহ।
জাগো নিউজ : আগামী দিনগুলোর জন্য শুভ কামনা থাকলো। দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য জাগো নিউজের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আপনাকেও ধন্যবাদ। জাগো নিউজের জন্যও শুভ কামনা থাকলো।
দায়িত্বের এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর নিজের কার্যক্রম নিয়ে প্রতিমন্ত্রী একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাগো নিউজকে। সচিবালয়স্থ নিজ কার্যালয়ে দেয়া সাক্ষাৎকারের চৌম্বক অংশ গাজীপুর অনলাইনের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো।
জাগো নিউজ : ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এক বছর পূরণ করলেন। দায়িত্ব নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন। আগামীর জন্য কি কি কর্মপন্থা ঠিক করেছেন?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : ২০১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর আমরা চেষ্টা করেছি ক্রীড়াঙ্গনকে আরোা ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে। প্রথম বছরটায় আমরা সেভাবেই করতে পেরেছি। বিগত বছরে আমাদের অনেক অর্জন ছিল। দু’একটা জায়গায় হয়তো সফল হইনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের সফলতা ছিল।
জাগো নিউজ : প্রথম বছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কি কি কাজ করেছে, যা নিয়ে আপনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আমি দায়িত্বের শুরুর দিক থেকেই বলি। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল গোল্ডকাপ সফলভাবে আয়োজন করেছি। প্রথমবারের মতো বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ গোল্ডকাপ আয়োজন করেছি। প্রথমবারের মতো ১০টি ডিসিপ্লিনে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নশিপ আমরা আয়োজন করেছি। আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের। এ বছর সেটার কাজ শুরু হবে।
জাগো নিউজ : প্রথম বছরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি ছিল?
ক্রীড়া প্রতিন্ত্রী : সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এসএ গেমস। কারণ, কয়েকবার গেমসের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। তাই আমাদের প্রস্তুতি ব্যহত হয়েছে। তারপরও হাল ছেড়ে দেইনি। চেষ্টা চালিয়ে গেছি। তার ফলাফল অতীতের চেয়ে ভালো করেছি, বেশি স্বর্ণ পেয়েছি।
জাগো নিউজ : যে কোনো দেশই খেলাধুলার উন্নয়নে বন্ধুপ্রতীম অনেক দেশের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে। আপনার সরকারের এমন কোনো উদ্যোগ ছিল কি না?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : দায়িত্বের প্রথম বছরে অনেকগুলো দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছি। এর মধ্যে ভারত, ব্রুনাই এবং জাতীসংঘের যে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্স, তাদের সঙ্গে আমরা সমঝোতা সাক্ষর করেছি। এভাবে ব্রাজিল ও ইউরোপের কিছু দেশের সঙ্গেও সাক্ষর করতে চাই। কাজও শুরু করে দিয়েছি এ নিয়ে।
জাগো নিউজ : তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলায় আকৃষ্ট করতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি না?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : দেখুন, স্বীকৃতি পেলে সবাই নিজনিজ ক্ষেত্রে আরো ভালো করতে উৎসাহী হয়। যে কারণে, আমরা প্রথমবারের মতো শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পদক প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা অনেক সম্মানী ভাতার ব্যবস্থাও করেছি। স্পোর্টসের সাথে সম্পৃক্ত অস্বচ্ছলদেরও আমরা সম্মানী ভাতা দেবো। ইতিমধ্যে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। দেশের প্রত্যেক জেলা পরিষদে চিঠি পাঠিয়েছি।
জাগো নিউজ : খেলাধুলার উন্নয়নে অবকাঠামো তৈরি বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই এক বছরে আপনি এ বিষয়ে বড় কোনো উদ্যোাগ নিতে পেরেছেন কি?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আপনারা জানেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কক্সবাজারে একটি ফুটবল ও ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কার্যক্রমও শুরু করেছি। এ ছাড়া একটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স করতে যাচ্ছি। বিশাল এরিয়া নিয়ে ক্রীড়া স্থাপনা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সেখানে প্রতিটি খেলা যাতে প্র্যাকটিস করতে পারে সে ব্যবস্থা থাকবে এবং অংশ গ্রহণ করতে পারে।
ইতিমধ্যে আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর এবং মাদারীপুরের শিবচরে এ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জরিপ কাজ শুরুর অনুমতিও দেয়া হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়ামকে আধুনিক করার উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে যে স্টেডিয়ামগুলোর অবস্থা ভালো নয়, সেগুলো ভালো করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা আরো একটা উদ্যোগ নিয়েছি। সারাদেশে যে মাঠগুলো আছে সেগুলোকে সংস্কার করে খেলার উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।
জাগো নিউজ : শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের প্রতিটি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সে প্রকল্পের কি অবস্থা?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : এ বছর ১৩৭ টি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। ডিবিবি প্রস্তুত সম্মন্ন হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম আধুনিকায়নের জন্য বড় ধরনের সংস্কার করা হচ্ছে। অ্যাথলেটিক ট্র্যাক ও ফুটবল খেলার মাঠ অনুপযুক্ত। এক মাঠে কয়েক রকম ঘাস। মাঠের মাটি উঠিয়ে নতুন করে করা হবে।
পুরো স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে শেড নির্মাণ ও নতুন চেয়ার করে দিচ্ছি। জায়ান্ট স্ক্রিন ও ফ্লাডলাইটসহ বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। জাতীয় পিতার নামে স্টেডিয়াম। সেটা মাথায় রেখেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি।
জাগো নিউজ : এর পাশাপাশি অন্য কোনো ক্রীড়া স্থাপনা তৈরি বা সংস্কার করা হয়েছে?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : কমলাপুর ফুটবল স্টেডিয়াম, সুলতানা কামালা মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে সুইমিং পুল বা সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছি। যেসব জেলায় ইনডোর স্টেডিয়াম নেই সেখানে এগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এ বছর আমরা ২১টি ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে ছিল প্রতিবন্ধীদের জন্য একটা খেলার মাঠ করে দেয়া। এ কারণে সংসদ ভবনের পাশে প্রতিবন্ধীদের জন্য মাঠ নির্মাণের জন্য নকশা চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে।
রাজশাহীতে নতুন একটা বিকেএসপি তৈরি করছি। সেখানে শহরের একটু বাইরের জায়গা অধিগ্রহণওসহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহেও একটি বিকেএসপি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জাগো নিউজ : দেশের ফুটবল নিয়ে কি ভাবছেন? বর্তমান সরকার তো ফুটবলের জন্য আলাদা বরাদ্দ রেখেছে বাজেটে। এটা নিয়ে কি বলবেন?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আপনারা জানেন, সরকার বাজেটে ২০ কোটি টাকা ফুটবলের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রেখেছে। এটা কিন্তু প্রথমবারের মতো ঘটনা দেশে। এর আগে কোনো খেলার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়নি বাজেটে।
জাগো নিউজ : এ বছর তো ফুটবলের নির্বাচন। দেশের অন্যতম প্রধান নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আমরা চাই, ফুটবল স্বাভাবিক গতিতে চলুক। ফুটবলে কিছু রুলস রয়েছে। ফিফা কর্তৃক তাদের কিছু আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। সেটা অবশ্যইা তারা মেনে চলবেন। পাশপাশি সরকারের যে আইনগত বিষয়গুলো আছে সেগুলোও তারা সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করবেন।
এখানে কে বিজয়ী হলেন আর কে পরাজিত হলেন সেটা আমাদের বিষয় না। আমরা চাই, সঠিক ব্যক্তিরাই নেতৃত্বে থাকুক। তাতে আমাদের ফুটবলের জন্যই ভালো হবে। আমরা চাই, ফুটবল আরো এগিয়ে যাক। র্যাংকিংয়ে অবস্থান আরো ভালো হোক। আপনারা দেখছেন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ফুটবল ভালো একটা অবস্থানে চলে যাবে।
জাগো নিউজ : আপনি শুরুতেই বলছিলেন এসএ গেমসে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রথম বছরে। গেমসের পর আপনার মূল্যায়ন কি?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : এসএ গেমসে ভালো করেছে এমন ফেডারেশনগুলোর জন্য আলাদা করে ১ কোটি টাকার ওপরে বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এটা হবে স্পেশাল বরাদ্দ। আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তারপরও আমরা এসএ গেমসে ভালো করেছি। যদিও কয়েকটি ডিসিপ্লিনে আরো প্রত্যাশা ছিল। বিশেষ করে শ্যুটিং, সুইমিং, ফুটবল, অ্যাথলেটিকস। এগুলোতে যদি সফল হতাম তাহলে আমাদের পূর্ণতা আসতো।
যে সব খেলায় খারাপ হলো সেগুলো নিয়ে বসে আমাদের ফাইন্ড আউট করতে হবে, কেন খারাপ হলো। আমরা মনে করি যে, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
জাগো নিউজ : আমরা যে ১৯ স্বর্ণ পেয়েছি তার মধ্যে একটা মাত্র স্বর্ণ ভারত-পাকিস্তানকে হারিয়ে। সেটা জিতেছেন ফেন্সিংয়ে ফাতেমা মুজিব। ভারত ও পাকিস্তান সব খেলায় অংশ নিলে আমাদের স্বর্ণতো আরো কম হতো তাই না?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: হয়তো কমতো। সেটা অন্য বিষয়। এর আগের আসরে আমরা চারটি স্বর্ণ পেয়েছিলাম। এবার কমলেও তার চেয়ে বেশি থাকতো।
জাগো নিউজ : সাঁতার, শুটিং, ফুটবলসহ কিছু জনপ্রিয় ডিসিপ্লিনে আমরা স্বর্ণ পাইনি। সেটা ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন কিনা?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : শুটিং ও সাঁতারের স্বর্ণ আমরা ধরে রাখতে পারিনি। ভারোত্তোলনে পেরেছি। আমার কাছে কষ্ট লেগেছে শুটিংয়ের পারফরম্যান্সে। যে ডিসিপ্লিন সব সময় আমাদের কিছু না কিছু উপহার দিতো। সুইমিংও আমাদের উপহার দিতো। এগুলোর ব্যর্থতা আমাকে পীড়া দেয়। এ খেলাগুলোয় আমরা বেশি অর্থ খরচ করি। এগুলোতে যদি সফল হতাম, তাহলে পরিপূর্ণতাটা বেশি হতো।
তবে আমরা যদি প্রশিক্ষণটা আরো বেশি নিতে পারতাম, তাহলে আরো ভালো ফলাফল হতো। নেপাল বারবার গেমস পিছিয়েছে। একটা সময় মনে হয়েছে যে, তারা বুঝি গেমস করতেই পারবে না। আমাদের ক্রীড়াবিদদের মধ্যেও ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছিল। বারবার বাধাগ্রস্থ না হলে স্বর্ণ আরো বাড়তো।
জাগো নিউজ : ওআইসিভুক্ত দেশগুলো ঢাকাকে ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে অর্জনটা কত বড়?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : ওআইসিভুক্ত যে দেশগুলো আছে তারা প্রতি বছর একটি শহরকে ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণা করে। আমরা কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেছিলাম ঢাকাকে ওআইসির ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণার জন্য। ওআইসি ইয়ুথ বিভাগের প্রধানকে ঢাকায় এনেছিলাম। তিনি সব কিছু দেখে খুশি হয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন। গত ২৫ ডিসেম্বর ওআইসি ঢাকাকে ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণা করে। এটা আমাদের বড় এক অর্জন।
জাগো নিউজ : মুজিববর্ষে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কি কি করছে?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : ২০২০ সালটি মুজিববর্ষ। মুজিববর্ষকে জাঁকজমকভাবে পালন করা হবে। ইতিমধ্যে ২৬০টির মতো কর্মসূচি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় কমিটি। সেখানে খেলাধুলারই আছে ১০০’র মতো ইভেন্ট। তার মানে সারা দেশ যা করছে তার চেয়ে বেশি করছে আমাদের এই মন্ত্রণালয়। সবকিছু ঠিকঠাক মতো বাস্তবায়ন করতে চাইলে মুজিববর্ষ হবে ক্রীড়াঙ্গনের বর্ষ।
জাগো নিউজ : মুজিববর্ষে কি কি চমক থাকতে পারে খেলাধুলায়?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : মুজিববর্ষে সবচেয়ে বড় চমক থাকবে ফুটবল এবং ক্রিকেটে। কারণ, এ ইভেন্ট দুটি ঘিরে কিছু লিজেন্ড আনার চেষ্টা চলছে। তারা যদি আসতে পারেন এবং তাদের ফ্যানদের ভালোবাস তৈরি হবে ফুটবল ও ক্রিকেটের ওপর। এখন পর্যন্ত যে আলোচনা হয়েছে, তাতে ম্যারাডোনার আশার সম্ভাবনাই বেশি। এ ছাড়া পেলেকে নিয়েও কাজ করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। তারাও হয়তো পেলেকে আনার চিন্তা করছে। এর পাশপাশি আরো কিছু চিন্তা আছে। সেটা অর্থের ওপর নির্ভর করছে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাসহ বড় বড় দেশের জার্সি গায়ে ওয়ার্ল্ড কাপ মাতিয়েছেন এমন কিছু সুপারস্টার আনার চেষ্টাও চলছে।
জাগো নিউজ : দায়িত্ব নেয়ার শুরুতে ফেডারেশনগুলোর ঝুলে থাকা নির্বাচন শুরু করেছিলেন। কয়েকটি করার পর থেমে গেলেন কেন?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : ফেডাশেনের নির্বাচন থেকে পেছনে সরতে হয়েছিল অন্য কারণে। এসএ গেমসটা সামনে ছিল। এ সময় নির্বাচন করে ঝামেলা পাকিয়ে ফেললে গেমসের প্রস্তুতি ক্ষতিগ্রস্থ হতো। এ কারণ আমরা ভেবেছি একটু স্লো গেলে ভালো। প্রথম দিকে যেভাবে শুরু করেছিলাম সেভাবে চালিয়ে গেলে আরো কিছু ফেডারেশনের নির্বাচন হয়ে যেতো।
গেমস শেষ হয়েছে। এখন আমরা ফেডারেশনগুলোকে চিঠি দেবো নির্বাচনের বিষয়ে। যারা যারা নির্বাচন করেনি। আমি মনে করি, ক্রীড়াঙ্গনের বিষফোঁড়া ফেডারেশনের অনির্বাচিত কমিটিগুলোকে। যাতে দ্রুত নির্বাচন হয় তার কার্যক্রম শুরু করবো।
জাগো নিউজ : দেশের প্রধান ক্রীড়া ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম; কিন্তু এ স্টেডিয়ামের পরিবেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আপনাকে পীড়া দেয় না?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আগে ঢাকায় আকষর্ণীয় জায়গা কম ছিল। হাতেগোনা যে কয়টি দর্শণীয় স্থাপনা ছিল তার মধ্যে এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম অন্যতম। এই এলাকা ঘিরে একটা পরিবেশও ছিল দারুণ। ২৪ তলা ভবন, হকি স্টেডিয়াম। একটা নান্দনিক সৌন্দর্য্য ছিল।
এ সৌন্দর্য্যটা ধাপেধাপে, বছর বছরে নষ্ট হয়েছে। দোকানগুলোর অত্যাচারে এসব হয়েছে। যখন যারা এসেছে তখন তারাই কিছু না কিছু নতুন দোকান বসিয়েছে। টয়লেট ভেঙ্গে দোকান বানিয়েছে, গেট ভেঙ্গে দোকান বানিয়েছে। খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুম ভেঙ্গেও দোকান বসিয়েছে। শুধু ব্যবসার দিকে চিন্তা ছিল। যার কারণে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের এই চেহারায় পরিণত হয়েছে।
আমার কাছে মনে হয়, সময় এসেছে এটাকে নতুন করে তৈরি করার। যদি ভেঙ্গে নতুন করে করতে পারি তখন আমরা আমাদের মনের মতো করে দোকানপাট বাদ দিয়ে স্টেডিয়ামকে স্টেডিয়ামের মতো করেই তৈরি করতে পারবো। বিশ্বে যে রকম দেখতে পাই। কোথায় স্টেডিয়ামের ভেতরে এমন দোকান থাকে না।
জাগো নিউজ : সেটা আমাদের দেশের মানুষ কবে নাগাদ দেখতে পারবেন? আবার তো সংস্কার করছেন প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে।
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : সংস্কার করছি। কারণ, স্টেডিয়ামের যে অবস্থা তাকে এখানে তো কোনো আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজন সম্ভব না। কিছুই নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা দিয়েছেন। ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করা সময় সাপেক্ষ ব্যপার।
জাগো নিউজ : সব কিছু মিলিয়ে কেমন কাটলো ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বছর?
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : নিজের কাজে আমি খুবই সন্তুষ্ট। সাকিবের আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়াসহ ২/১টা ঘটনা বাদ দিলে দেখবেন এক বছরে আমাদের অনেক অর্জন আছে। দেখেন, আরচারিতে রোমান সানা সরাসরি অলিম্পিক খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। দাবায় ফাহাদ রহমান প্রথমবারের মতো ওয়ার্ল্ডকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে এই বয়সে। তাই আমি মনে করি, এক বছরে সফল হয়েছি ইনশাল্লাহ।
জাগো নিউজ : আগামী দিনগুলোর জন্য শুভ কামনা থাকলো। দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য জাগো নিউজের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী : আপনাকেও ধন্যবাদ। জাগো নিউজের জন্যও শুভ কামনা থাকলো।
COMMENTS