গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে এখন চলছে করোনা আতঙ্ক। এ আতঙ্কে গাজীপুরের অনেক কারখানার শিপমেন্টের মালামাল রপ্তানি করতে পারছেন না। কিছু কারখানায় পোশাক উৎপাদন থেকে বিরত রয়েছে। এতে অর্থসংকটে পড়েছে কারখানা মালিকরা। অর্থ সংকটের কারণে তারা কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও দিতে পারবে না। সব মিলে এখন কি কিরবেন তা নিয়ে হতাশায় জীবনযাপন করছেন তারা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার পোশাকসহ নানা শিল্পকারখানা রয়েছে। এগুলোতে কাজ করছেন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ শ্রমিক। এখন পর্যন্ত কোনো পোশাক কারখানায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার মালিক-শ্রমিকদের মাঝে।
বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিধোরে আমরা কারখানায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খুব জোর দিচ্ছি। করোনার কারণে কোনো কারখানা এখনও বন্ধ হয়নি। তবে মালের শিপমেন্ট সব বন্ধ হয়ে পড়েছে। ক্রেতারা বলছে আমরা মাল পরে নেব। তবে কবে নেবে তার কোনো দিনক্ষণ জানি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী এক সপ্তাহের (১০ এপ্রিলের) মধ্যে কারোরই কোনো কাজ থাকবে না। এসব নিয়ে সরকারের সঙ্গে শীঘ্রই বৈঠক হবে এবং একটা সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমন ঠেকাতে কারখানাগুলোতে কি করা যাবে আর করা যাবে না তার নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। বিজিএমইএ-করোনা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, গার্মেন্টস শিল্প অধ্যুষিত এলাকা নজরদারিতে রাখতে বিজিএমইএ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উত্তরা অফিসে হটলাইন স্থাপন করা হয়েছে। শ্রমিকদের সচেতনতা সৃষ্টিতে না কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে পোশাক কারখানায় করোনা প্রভাবসসহ নানা বিষয়ে মাননীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর মন্নুজান সুফিয়ানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এসব নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ধলাদিয়া এলাকার ইপোক গার্মেন্টের মালিক ও এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম মোর্শেদী জানান, আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ পোশাক/পণ্য ইউরোপের বাজারে যাচ্ছে। আজ করোনা ভাইরাসের কারণে ইউরোগের বেশ কয়েকটি দেশে লকডাউন থাকায় পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না। মালের অর্ডার ক্যান্সেল হয়ে গেছে। এতে আমরা নতুন করে কাপড়ও কাটতে পারিছি না। ব্যাংক থেকেও আমাদের লোন ছাড় করছে না। কারখানাও বন্ধ রাখতে পারছি না। আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। এখন আমরা ক্রেতা ও সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের কোত্থেকে বেতন/ভাতদি পরিশোধ করবো তা নিয়েও টেনশনে আছি। করোনা থেকে রক্ষা পেতে আমরা সকলে মাস্ক ব্যবহার করছি। প্রয়োজন হলে শ্রমিকদের তামপাত্রা মেপে ভেতরে ঢুকানো হচ্ছে। ভিজিটর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কর্মস্থল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, কাজের টেবিলকে ও হাতকে জীবাণুমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সাবান ও কেক্সাসল সরবরাহ করছি এবং এসবের ব্যবহার নিশ্চিত করছি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু জানান, গার্মেন্টস সেক্টরে পাশাপাশি অবস্থান করে এত বেশি জনগোষ্ঠী কাজ করছে যা অন্য কোনো সেক্টরে নেই। তাদের মধ্যে কেউ একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সহজেই পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়বে তথা বৃহৎ জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। এক কথায় করোনা তখন সহজে দ্রুত মহামারি রূপ নেবে। আগে জীবন বাঁচানো দরকার পরে কর্ম। এজন্য তিনি দু সপ্তাহের জন্য পোশাক কারখানাগুলো মার্চের বেতন দিয়ে ছুটি দেয়া উচিৎ। পরে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন মিশু। এ সেক্টরটিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর নানা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কারখানার মালিক-শ্রমিকরা।
গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গী, ভোগড়া, চান্দনা-চৌরাস্তা বেশ ঘনবসতি এলাকা। যার কারণে এসব এলাকায় করোনা ভাইরাসের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্যবিভাগ ও পোশাক কারখানার কর্তৃপক্ষ। কারখানার পক্ষ থেকে দিনে দুই বার মেডিসিন মিশ্রিত পানি দিয়ে মেঝে ধোয়া-মোছা হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিকদের সচেতন করা হচ্ছে।
শনিবার শিল্পাঞ্চল গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় এনটিকেসি, এমএম নিট কারখানাসহ বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কারখানার শ্রমিকদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ করে মাস্ক বিতরণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শ্রমিকরা ও কারখানা কর্তৃপক্ষের দেয়া মাস্ক পড়ে কারখানায় কাজ করছেন এবং কাজ শেষে বাসায় যাওয়া-আসার পথে ও তারা মাস্ক ব্যবহার করছেন। একই সঙ্গে নিয়মিত সাবান ও জীবাণুনাশক দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে সতর্ক থাকার চেষ্টাও করছেন শ্রমিকরা।
শনিবার সকালে কথা হয় গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকার এনটিকেসি পোশাক কারখানা শ্রমিক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোনাবাড়ি শিল্পাঞ্চল এলাকায় সবগুলি কারখানাতেই মাস্ক দেয়া হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। কারখানায় প্রবেশের সময় তারা হাত দুয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। তারপরও করোনা ভাইরাস নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ আতঙ্ক রয়েছে। কখন যে কে আক্রান্ত হয় তা তো বলা যাচ্ছে না। তাই সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কাশিমপুর এলাকার মাল্টিফ্যাব কারখানার অপারেটর আব্দুল হাই জানান, কারখানায় মালিকের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। কি করতে হবে আর কি করা যাবে না তা তার ও একটা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা মেনে চলছি কিন্ত তারপরও একটা আতঙ্ক সব সময় কাজ করছে। কখন যেন আক্রান্ত হয়ে যাই।
গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার মেট্রিক্স নামের পোশাক কারখানায় শ্রমিক সামসুল ইসলাম জানান, আমরা খুব আতঙ্কের মধ্য দিয়ে কাজ করছি। এমন অবস্থায় মালিকপক্ষ আমাদের মাস্ক পড়তে বলছেন আর বেশি বেশি হাত ধুতে বলছেন। তারপরও আমাদের মধ্যে একধরনের অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। যদি ভাইরাসটি ছড়ায় তাহলে তো আমাদের অর্থসংকটে পড়তে হবে। তখন পরিবার নিয়ে খাবো কি? খুবই দুঃশ্চিন্তার মধ্যে আছি।
গাজীপুর গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন সদস্য মো. সামছুল ইসলাম জানান, গাজীপুরে পোশাক কারখানাগুলোতে করোনার প্রভাব পড়েনি। করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কারখানার মালিকরা বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।কারখানা বন্ধ হলে আমাদেরই বেশি সমস্যা। শ্রমিকরা তখন কি করে চলবে। ঘর ভাড়া, থাকা খাওয়ার খরচ মিটাবে কি করে?
গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার গরীব অ্যান্ড গরীব সোয়েটার কারখানা পরিচালক মো. ফজলুল হক ভুইয়া জানান, পোশাক কারখানাও করোনার প্রভাব পড়েছে। বায়ার নেই। অনেক কারখানা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পণ্যের শিপমেন্টও কমে গেছে। তারপরও যে সকল কারখানা চলছে তাদের মালিকরাও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমি আমাদের কারখানায় কর্মরত সকল শ্রমিক ও স্টাফদের ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে সচেতন করছি। বারবার হাত সাবান-স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এবং মুখে মাস্ক পড়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, কারখানা শ্রমিক-মালিকদের করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারমধ্যে কারখানাগুলোতে বিদেশি বায়ারদের প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ, কারখানায় ও শ্রমিকদের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। রোববার থেকে কারখানাগুলোতে এ সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করা হবে। তিনি সকলকে আতঙ্কিত না হয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার পোশাকসহ নানা শিল্পকারখানা রয়েছে। এগুলোতে কাজ করছেন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ শ্রমিক। এখন পর্যন্ত কোনো পোশাক কারখানায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার মালিক-শ্রমিকদের মাঝে।
বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিধোরে আমরা কারখানায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খুব জোর দিচ্ছি। করোনার কারণে কোনো কারখানা এখনও বন্ধ হয়নি। তবে মালের শিপমেন্ট সব বন্ধ হয়ে পড়েছে। ক্রেতারা বলছে আমরা মাল পরে নেব। তবে কবে নেবে তার কোনো দিনক্ষণ জানি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী এক সপ্তাহের (১০ এপ্রিলের) মধ্যে কারোরই কোনো কাজ থাকবে না। এসব নিয়ে সরকারের সঙ্গে শীঘ্রই বৈঠক হবে এবং একটা সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমন ঠেকাতে কারখানাগুলোতে কি করা যাবে আর করা যাবে না তার নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। বিজিএমইএ-করোনা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, গার্মেন্টস শিল্প অধ্যুষিত এলাকা নজরদারিতে রাখতে বিজিএমইএ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উত্তরা অফিসে হটলাইন স্থাপন করা হয়েছে। শ্রমিকদের সচেতনতা সৃষ্টিতে না কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে পোশাক কারখানায় করোনা প্রভাবসসহ নানা বিষয়ে মাননীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর মন্নুজান সুফিয়ানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এসব নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ধলাদিয়া এলাকার ইপোক গার্মেন্টের মালিক ও এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম মোর্শেদী জানান, আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ পোশাক/পণ্য ইউরোপের বাজারে যাচ্ছে। আজ করোনা ভাইরাসের কারণে ইউরোগের বেশ কয়েকটি দেশে লকডাউন থাকায় পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না। মালের অর্ডার ক্যান্সেল হয়ে গেছে। এতে আমরা নতুন করে কাপড়ও কাটতে পারিছি না। ব্যাংক থেকেও আমাদের লোন ছাড় করছে না। কারখানাও বন্ধ রাখতে পারছি না। আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। এখন আমরা ক্রেতা ও সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের কোত্থেকে বেতন/ভাতদি পরিশোধ করবো তা নিয়েও টেনশনে আছি। করোনা থেকে রক্ষা পেতে আমরা সকলে মাস্ক ব্যবহার করছি। প্রয়োজন হলে শ্রমিকদের তামপাত্রা মেপে ভেতরে ঢুকানো হচ্ছে। ভিজিটর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কর্মস্থল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, কাজের টেবিলকে ও হাতকে জীবাণুমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সাবান ও কেক্সাসল সরবরাহ করছি এবং এসবের ব্যবহার নিশ্চিত করছি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু জানান, গার্মেন্টস সেক্টরে পাশাপাশি অবস্থান করে এত বেশি জনগোষ্ঠী কাজ করছে যা অন্য কোনো সেক্টরে নেই। তাদের মধ্যে কেউ একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সহজেই পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়বে তথা বৃহৎ জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। এক কথায় করোনা তখন সহজে দ্রুত মহামারি রূপ নেবে। আগে জীবন বাঁচানো দরকার পরে কর্ম। এজন্য তিনি দু সপ্তাহের জন্য পোশাক কারখানাগুলো মার্চের বেতন দিয়ে ছুটি দেয়া উচিৎ। পরে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন মিশু। এ সেক্টরটিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর নানা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কারখানার মালিক-শ্রমিকরা।
গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গী, ভোগড়া, চান্দনা-চৌরাস্তা বেশ ঘনবসতি এলাকা। যার কারণে এসব এলাকায় করোনা ভাইরাসের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্যবিভাগ ও পোশাক কারখানার কর্তৃপক্ষ। কারখানার পক্ষ থেকে দিনে দুই বার মেডিসিন মিশ্রিত পানি দিয়ে মেঝে ধোয়া-মোছা হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিকদের সচেতন করা হচ্ছে।
শনিবার শিল্পাঞ্চল গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় এনটিকেসি, এমএম নিট কারখানাসহ বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কারখানার শ্রমিকদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ করে মাস্ক বিতরণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শ্রমিকরা ও কারখানা কর্তৃপক্ষের দেয়া মাস্ক পড়ে কারখানায় কাজ করছেন এবং কাজ শেষে বাসায় যাওয়া-আসার পথে ও তারা মাস্ক ব্যবহার করছেন। একই সঙ্গে নিয়মিত সাবান ও জীবাণুনাশক দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে সতর্ক থাকার চেষ্টাও করছেন শ্রমিকরা।
শনিবার সকালে কথা হয় গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকার এনটিকেসি পোশাক কারখানা শ্রমিক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোনাবাড়ি শিল্পাঞ্চল এলাকায় সবগুলি কারখানাতেই মাস্ক দেয়া হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। কারখানায় প্রবেশের সময় তারা হাত দুয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। তারপরও করোনা ভাইরাস নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ আতঙ্ক রয়েছে। কখন যে কে আক্রান্ত হয় তা তো বলা যাচ্ছে না। তাই সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কাশিমপুর এলাকার মাল্টিফ্যাব কারখানার অপারেটর আব্দুল হাই জানান, কারখানায় মালিকের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। কি করতে হবে আর কি করা যাবে না তা তার ও একটা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা মেনে চলছি কিন্ত তারপরও একটা আতঙ্ক সব সময় কাজ করছে। কখন যেন আক্রান্ত হয়ে যাই।
গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার মেট্রিক্স নামের পোশাক কারখানায় শ্রমিক সামসুল ইসলাম জানান, আমরা খুব আতঙ্কের মধ্য দিয়ে কাজ করছি। এমন অবস্থায় মালিকপক্ষ আমাদের মাস্ক পড়তে বলছেন আর বেশি বেশি হাত ধুতে বলছেন। তারপরও আমাদের মধ্যে একধরনের অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। যদি ভাইরাসটি ছড়ায় তাহলে তো আমাদের অর্থসংকটে পড়তে হবে। তখন পরিবার নিয়ে খাবো কি? খুবই দুঃশ্চিন্তার মধ্যে আছি।
গাজীপুর গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন সদস্য মো. সামছুল ইসলাম জানান, গাজীপুরে পোশাক কারখানাগুলোতে করোনার প্রভাব পড়েনি। করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কারখানার মালিকরা বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।কারখানা বন্ধ হলে আমাদেরই বেশি সমস্যা। শ্রমিকরা তখন কি করে চলবে। ঘর ভাড়া, থাকা খাওয়ার খরচ মিটাবে কি করে?
গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার গরীব অ্যান্ড গরীব সোয়েটার কারখানা পরিচালক মো. ফজলুল হক ভুইয়া জানান, পোশাক কারখানাও করোনার প্রভাব পড়েছে। বায়ার নেই। অনেক কারখানা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পণ্যের শিপমেন্টও কমে গেছে। তারপরও যে সকল কারখানা চলছে তাদের মালিকরাও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমি আমাদের কারখানায় কর্মরত সকল শ্রমিক ও স্টাফদের ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে সচেতন করছি। বারবার হাত সাবান-স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এবং মুখে মাস্ক পড়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, কারখানা শ্রমিক-মালিকদের করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারমধ্যে কারখানাগুলোতে বিদেশি বায়ারদের প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ, কারখানায় ও শ্রমিকদের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। রোববার থেকে কারখানাগুলোতে এ সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করা হবে। তিনি সকলকে আতঙ্কিত না হয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
COMMENTS