প্রকল্প বাস্তবায়নে অহেতুক দেরি, ধীরগতি ও সমন্বয়হীনতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ অসন্তোষের কথা জানান তিনি। এ সময় কোনো কোনো প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থার সক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেকের ওই বৈঠকে প্রায় ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়সংবলিত ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ২৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা (ঋণ ও অনুদান) থেকে ১০৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। তবে সংশোধিত প্রকল্পের ক্ষেত্রে শুধু বর্ধিত ব্যয়ের হিসাবটাই ধরা হয়েছে।
বৈঠক শেষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বাস্তবায়নের গতি নেই, আবারো ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে—এমন দুটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হবে। প্রকল্পের মূল কাজ বাস্তবায়নে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনকে রিভিউ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ক্ষোভ ও বিরক্তির পাশাপাশি এখন থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ কিংবা রাবার ড্যাম নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, প্রকৃতির সঙ্গে খেলতে গেলে আরো সাবধান হতে হবে। কেননা একদিকে ভাঙন রোধ করা হলে দেখা যাবে অন্যদিকে ভেঙে সবকিছুই শেষ করে দিচ্ছে। তাই এখন থেকে বাঁধ হোক বা রাবার ড্যাম হোক সুদূরপ্রসারী স্টাডি করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গতকালের একনেক বৈঠকে ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পে ১০৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে ৯৮ কোটি টাকা প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। এছাড়া দুই বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগছে সাড়ে সাত বছর। এই সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে এত দেরি ও বাড়তি অর্থের কারণ কী, জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থার সক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্প প্রস্তাবে পণ্য ক্রয়ে অতিরিক্ত ব্যয় ধরার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের জনবলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে পাতায় পাতায় উল্টে প্রকল্প প্রস্তাব দেখা সম্ভব হয় না। তবে এখন থেকে প্রকল্প মূল্যায়নে আরো কঠোরতা অবলম্বন করব। আইএমইডিকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে। আইএমইডির দায়িত্ব হলো একটি প্রকল্পের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দেখা। কিন্তু সেখানেও জনবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। আইএমইডির রিপোর্টগুলো যথেষ্ট ক্ষুরধার হচ্ছে না।
গতকাল অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৩৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট-ব্রিজিং’ প্রকল্পটিরও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি নোয়াখালীর সুবর্ণচর, হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হলো ১৭১ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, বিকল্প বাঁধ নির্মাণ, নদী তীর প্রতিরক্ষা ও ২৯৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ। এছাড়া ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ হতে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ’ প্রকল্প, ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কুমিল্লা জেলার তিতাস ও হোমনা উপজেলায় তিতাস নদী (লোয়ার তিতাস) পুনঃখনন’, ৪০১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘গাইবান্ধা জেলার সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোঘাট ও খানাবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা যমুনা নদীর ডান তীরের ভাঙন হতে রক্ষা’ প্রকল্প এবং ১২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
COMMENTS