ডেস্ক : আওয়ামী লীগে যেন হুটহাট করে সাহেদ-পাপিয়ারা ঢুকে না পরে। আওয়ামী লীগে হঠাৎ করে কেউ যেন নেতা বনে না যায়। আবার আওয়ামী লীগ না করে দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, অপকর্ম করে ধরা পরে আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচয় দেওয়ার প্রবনতাও যেন বন্ধ হয়, সে কারণে এবার আওয়ামী লীগ তাদের প্রত্যেকটি কর্মীর জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে, ২ বছর আগেই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন সেটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে।
ডিজিটাল পরিচয়পত্রের মধ্যে প্রত্যেকটি কর্মীর একটা নাম্বার থাকবে। যখন তিনি কর্মী হিসেবে দলে নিবন্ধিত হবেন তখন তার এই নাম্বার বসানো হবে। তার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো ডাটাবেজে এন্ট্রি করা হবে। কাজেই যখন একজন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগার বলে পরিচয় দেওয়া হবে তখন ওই ডাটাবেজ পরীক্ষা করে দেখবে আসলে তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী কিনা- নাকি আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে দলের কর্মীদের এই রকম নাম নিবন্ধন করার পদ্ধতি আছে। একটি দলে কত কর্মী আছে সেই সংখ্যা এবং তাদের তথ্য উপাত্ত ডাটাবেজ সংগ্রহ করা হয়।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের কর্মীদের এই রকম তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য আসলে কত সেটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জানতে পারে না। যার ফলে যেটি সমস্যা হয় বিভিন্ন দুর্বৃত্ত, অপকর্মকারীরা আওয়ামী লীগে যে কোনভাবে ঢুকে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি বন্ধ করার জন্য এই ডিজিটাল পদ্ধতির সাহায্য নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, যখন একজন কর্মীর সমস্ত তথ্যাদি ডিজিটাল পদ্বতিতে ডাটাবেজে থাকবে তখন একদিকে যেমন ওই কর্মী অপকর্ম করতে পারবে না। অন্যদিকে তেমনি যে কাউকে আওয়ামী লীগে ঢুকানোর যে গেট সেই গেটও বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন যে, এখন দেখা যাচ্ছে একজন নেতা তার গদি এলাকায় পাকাপোক্ত করার জন্য রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য দুর্বৃত্তদের দলে নিচ্ছেন। কিন্তু এমন ব্যক্তি আওয়ামী লীগ হয়েছেন যিনি কোন সদস্য পদের জন্য আবেদন করেননি, কোন ফরম ফিলআপ করেননি। এমনকি তার সমন্ধে কোন তথ্য নেই। কিন্তু তিনি যেহেতু নেতার সঙ্গে থাকেন, সেই জন্য তিনি আওয়ামী লীগের পাতি নেতায় পরিণত হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময় ফরিদপুরে কিংবা সাহেদ- পাপিয়ার ঘটনায় তার বড় প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মনে করেন। আর এ কারণেই ডিজিটাল এই ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, নতুন পদ্বতিতে একজন কর্মী যখন আওয়ামী লীগের সদস্য হবেন, তখনই তার ফরম ফিলআপ করতে হবে এবং ফরম ফিলআপে তার যাবতীয় তথ্য দেওয়া হবে। তার জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি দিয়ে তাকে আবেদন করতে হবে। প্রথমে তাকে অস্থায়ী সদস্য করা হবে। তার তথ্যাদি যাচাই বাছাই করে দেখা হবে যে, তিনি সঠিক তথ্য দিয়েছেন কিনা। সঠিক তথ্য দিলে তিনি পূর্ণাঙ্গ সদস্য হবেন। পূর্ণাঙ্গ সদস্য হলে তিনি একটি ডিজিটাল কার্ড পাবেন। যার ফলে একদিকে যেমন আওয়ামী লীগ জানবে যে তাদের কর্মী সংখ্যা কত, অন্যদিকে ওই কর্মীটিও আওয়ামী লীগের সদস্য বলে যেমন গর্ববোধ করতে পারবেন তেমনি দায়িত্ববোধ তৈরী হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, কিছু কিছু গণমাধ্যমে কোথাও কোন অপকর্ম হলেই তাকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ অথবা যুবলীগের নেতা বানিয়ে দেওয়া হয়। আসলে তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের কোন কর্মী হয়তো নন। কিন্তু যখন গণমাধ্যমে লেখা বা বলা হয় তখন হয়তো সাধারণ মানুষ মনে করে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই এই অপকর্মটি করেছে। বদনাম হয় আওয়ামী লীগের। যদি আওয়ামী লীগের সদস্যদের তালিকা থাকে এবং সদস্যদের ডিজিটাল পদ্বতিতে তথ্য ভাণ্ডার তৈরী করা যায় তাহলে যখনই কোন দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজকে আওয়ামী লীগের পরিচয় দেওয়া হবে, তথ্য ভাণ্ডার থেকে দেখা যাবে ওই ব্যক্তিটি আসলে আওয়ামী লীগের সদস্য কিনা। যদি তিনি আওয়ামী লীগের সদস্য বলে বিবেচিত হন তাহলে দল তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম জনপ্রিয় দলটি এর মাধ্যমে আরো সংগঠিত হতে পারবে এবং কর্মীদেরও মনোবল বৃদ্ধি পাবে। আশা করা হচ্ছে করোনার সংক্রমণ একটু কমে গেলেই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। তবে ডিজিটাল আওয়ামী লীগের তথ্য ভান্ডার তৈরীর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলে দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার
COMMENTS