ভোট কেন্দ্রে ভোটারের দেখা নেই। বহিরাগতরা দিব্যি অনায়াসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। যার ইচ্ছা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করছে। ঘুরছে ফিরছে। আবার কেউ সেলফি তুলছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে এসব দৃশ্য চোখে পড়ে। বিশেষ করে উত্তরার মালেকা বানু আদর্শ বিদ্যানিকেতন, খন্দকার আবাসন বিদ্যানিকেতন, আমজাদ স্মৃতি বিদ্যানিকেতন, এসএম মোজাম্মেল হক বিজনেস স্কুল অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজ, এমারত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তরা আনোয়ারা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাঁওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়, উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের দৃশ্য এমনই ছিল।
সবকটি কেন্দ্রেই দেখা গেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা মার্কার প্রার্থী মো. হাবিব হাসানের ব্যাজ পরা লোকজন কেন্দ্রের ভেতর অবস্থান করছেন। কিছু অংশ কেন্দ্রের সামনে অবস্থান করছেন। আবার কখনো কখনো ভোটগ্রহণ কক্ষের ভেতরে অবাধে তারা যাতায়াত করছেন। এসব ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। এই আসনের দু-একটি কেন্দ্র ছাড়া কোথাও ধানের শীষ প্রার্থীর এজেন্ট নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। যদিও বিএনপি প্রার্থী এসব কেন্দ্র পরির্দশন করার সময় তার সঙ্গে নেতাকর্মীরা ছিলেন। তবে সংখ্যায় তা খুবই কম।
এদিকে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, নৌকা মার্কার প্রার্থী হাবিব হাসানের ব্যাজ পরা বিপুল সংখ্যক লোক কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে কিশোর, তরুণ এবং বয়স্ক ব্যক্তিদেরকেও দেখা গেছে। এদের অনেকেই ভোটার নয়; কিন্তু তারাও ভোট কেন্দ্রে অবাধে বিচরণ করছেন। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের অনেকটা নির্বিকার দেখা যায়। বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ বা প্রবেশের ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
এসব ভোট কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা গেছে এমারত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন ও আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান একই বাউন্ডারির মধ্যে। কিন্তু এখানে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আলাদা কেন্দ্র রয়েছে।
বেলা পৌনে ১২টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, এই তিন ভোট কেন্দ্রের মাঠের মধ্যে প্রায় ৩শ থেকে ৪শ বহিরাগত অবস্থান করছেন। তাদের সবার গলায় নৌকা প্রার্থীর ব্যাজ ঝোলানো। তাদের পাশেই পুলিশ সদস্যদের নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
বিএনপির প্রার্থী ভোট দিতে এসে বহিরাগতদের বিষয়ে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই আরিফের কাছে প্র্রতিবাদ জানাতে গেলেও তার সঙ্গে তিনি কথা বলেননি। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরা বারবার প্রশ্ন করলেও এড়িয়ে যান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পাশাপাশি থাকা এই তিনটি ভোট কেন্দ্রের একটিতে ভোট দিতে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা জাহানারা ইসলাম। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি জীবনে এমন ভোট দেখিনি। জীবনে অনেক ভোট দিয়েছি। আগে দেখতাম কেন্দ্রের ভেতরে ভোটাররা থাকতো। আর এখন কেন্দ্রের ভেতরে ভোটার নেই, সব বহিরাগত মানুষ।
নৌকা প্রার্থীর ব্যাজ পরা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তারা পরিচয় শুনেই সরে যান। এর মধ্যে লিটন নামের এক তরুণ বলেন, আমাদের এলাকার লোকজন আছে। এলাকার বড় ভাইদের সঙ্গে আছি। এটা বলে তিনিও চলে যান।

COMMENTS