আমিনুর রশিদ: দেশের বিভিন্নস্থানে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলের অংশবিশেষ ভাইরাল করে ফেসবুক, ইউটিউবে ব্যাপক প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রচরনার পেছনে টাকা আয়ের প্রবণতাও কাজ করছে। আর অকারনে বক্তাদের অহেতুক উত্তেজিত হয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। এসব বক্তাদের ভাষা প্রয়োগও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। সমাজে বিদ্যমান অপরাধ প্রবণতা, তথাকথিত ধর্মের বিচ্যুতিতে ক্ষুদ্ধ নছিয়তকারীরা ওয়াজ মাহফিলে বয়ানে গিয়ে অশালীন ও অরুচিকর ভাষা প্রয়োগ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার আয়োজনকারীদের ‘কাপাইতে হবে’ বা ‘জমাইতে হবে’ জাতীয় আবদারও কোনো কোনো ওয়াজকারীকে উত্তেজনাকর বক্তব্য দিতে ভূমিকা রাখে।
এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান মনিটর লিখেছে, ধীরে ধীরে মৌলিকত্ব এবং ধর্মীয় আবেদন হারাচ্ছে বাংলাদেশের ‘ইসলামিক জলসাগুলো’ এবং ফিঁকে হয়ে আসছে ধর্মীয় চেতনা ও ভাবগাম্ভীর্য। জাতীয়-আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রসঙ্গের বদলে হাস্য রস, খিস্তি-খেউড়ও মাহফিলে প্রকট হচ্ছে। ফলে ইসলামি দাওয়াত ও আমল-আখলাকের শিক্ষা পৌঁছানোর ঐতিহাসিক স্বীকৃত এ মাধ্যমটি কারো কারো কাছে ক্রমশ যেন রূপ নিচ্ছে ‘তামাশার আসরে’।
এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান মনিটর লিখেছে, ধীরে ধীরে মৌলিকত্ব এবং ধর্মীয় আবেদন হারাচ্ছে বাংলাদেশের ‘ইসলামিক জলসাগুলো’ এবং ফিঁকে হয়ে আসছে ধর্মীয় চেতনা ও ভাবগাম্ভীর্য। জাতীয়-আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রসঙ্গের বদলে হাস্য রস, খিস্তি-খেউড়ও মাহফিলে প্রকট হচ্ছে। ফলে ইসলামি দাওয়াত ও আমল-আখলাকের শিক্ষা পৌঁছানোর ঐতিহাসিক স্বীকৃত এ মাধ্যমটি কারো কারো কাছে ক্রমশ যেন রূপ নিচ্ছে ‘তামাশার আসরে’।
প্রবীণদের কেউ কেউ এর জন্য মাহফিলে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বিজ্ঞ আলেমদের অনুপস্থিতি ও প্রযুক্তির প্রভাবকে দায়ী করে বলছেন, আগেও হয়তো আঞ্চলিক পর্যায়ে ছোট ছোট আয়োজনে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে এ ধারা চলে আসছিল কিন্তু তার প্রভাব ছিল সীমাবদ্ধ। কিন্তু ফেসবুক-ইউটিউবের প্রভাবে এখন সবকিছুই আঞ্চলিক সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে জাতীয় পর্যায়ে, ভাইরাল হচ্ছে এবং স্থায়ী একটি প্রভাব সৃষ্টি করছে।
ফেসবুক ও ইউটিউবে শুধু ‘ওয়াজ’ লিখে সার্চ দিয়েই দেখা যায় নামের আগে-পরে বাহারি বিশেষণযুক্ত অসংখ্য আলেম-ওলামার অসংখ্য ওয়াজ। বিতর্কিত কয়েকজন বক্তার বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে তার প্রমানও পাওয়া গেছে।
মাওলানা তারেক মনোয়ারের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল আছে। মাওলানা মামুনুল হকের আছে ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ। এছাড়াও মাওলানা মিজানুর রহমান আজাহারীর ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকেও নিয়মিত টাকা আয় হয়।
তাকওয়া মিডিয়া সেন্টার নামের ইউটিউব চ্যানেলটি বলছে, ‘হাসি কান্নায় মজার ওয়াজ’। পাশে একটু ছোট করে লেখা- ভাইরাল ওয়াজ। তাতে ক্লিক করতেই দেখা গেল- উত্তেজনায় শরিয়তপন্থী এক হুজুর এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন। হঠাৎ দুই হাতের উপর ভর দিয়ে লাফ দিয়ে পা তুলে বসে পরলেন সিটে। মোড় দিয়ে ঘুরে বসে চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক নিয়ে বললেন-আইজগা বেডা খেলা দেহামু। এমন ওয়াজের তালিকায় আরও আছে, ফানা ফানা ওয়াজ, এমন ওয়াজ আর শুনিনি- হাসতে হাসতে প্যান্ট খুলে যায়, ১০০% মজার ওয়াজ- কলিজা ঠান্ডা, ডিজিটাল বক্তার ডিজিটাল ওয়াজ, ডিজিটাল ওয়াজ-মাল যায়তেছে ইত্যাদি।
ওয়াজ মাহফিলের বিরাজমান এ বিশৃঙ্খলার মধ্যে নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ‘শিশু বক্তা’ ও ‘কিশোর বক্তা’। ইউটিউব চ্যানেলে এসব শিশু ও কিশোর বক্তাদের ওয়াজে লাইক-শেয়ার অনেক হলেও সমালোচনা আছে আলেম ওলামাসহ দর্শক শ্রোতাদের মাঝে।
মুফতি উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ বলেন, বিশ্বনবী বলেছেন অযোগ্য লোকের হাতে যখন দায়িত্ব অর্পণ হয় তখন কেয়ামতের অপেক্ষা কর। আমি বলব, বাংলাদেশের শিশু বক্তা, ২৬ ইঞ্চি বক্তা, অন্ধ বক্তা, আম্মা হুজুর, মহিলা বক্তা এইসব হলো অযোগ্য ওয়াজ বা নিম্নমানের ওয়াজ। আর আমরা অযোগ্য লোককে দাওয়াত করে ওয়াইজি বানিয়ে দিচ্ছি। এর মানে কেয়ামতের আলামত নিজেরাই সংঘটিত করছি।
COMMENTS