ডেস্কঃ শর্ত সাপেক্ষে মুক্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্য রকম জীবন কাটছে। জানা গেছে, গুলশান নিজ বাসা ফিরোজাতেে অবস্থানরত বেগম জিয়া নিয়মিত নামাজ আদায়, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, ইসলামী বই, কিতাব, তসবিহ পড়ে দিন রাতের অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছেন। রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরত্বে এখন তিনি।
বাসাতে গৃহ পরিচারিকাদের সান্নিধ্যেই তার এখন সময় কাটে। রাজনৈতিক কোনও ধরনের কর্মকাণ্ড কিংবা নেতা কর্মীদের সাক্ষাত থেকে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ বিরত রেখেছেন।এমনকি পরিবারের বাইরে তিনি দলের কোনও নেতার সাথেও ফোনালাপ করেন না। এর বাইরে ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বোন সেলিমা ইসলামরা আসলে গল্প করে সময় কাটান। ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডক্টর জোবাইদা রহমান লন্ডন থেকে প্রতিদিন সকাল-বিকেল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন।
প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান সিথিও নিয়মিত ফোনে খোঁজখবর নেন বেগম জিয়ার। পারিবারিক সূত্রগুলি বলেছে, খালেদা জিয়া নুডলস, চিকেন ফ্রাই, মিষ্টি, রসমালাই, ফিরনি, ভুনা গরুর মাংশ, ছোট ছোট মাছ ও ফলমূল খেতে পছন্দ করেন। এসব খাবার নিয়মিত তাকে দেয়া হচ্ছে। মুক্তির পর দুই দফায় ছয় ছয় মাস করে তিনি জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছেন।
এছাড়া রাতে খাওয়ার জন্য তাকে এক গ্লাস দুধ, ও দেশি নুরগির ডিম দেয়া হয়। বোন সেলিমা ইসলামের বাসা থেকে রান্না খাবার আসে নিয়মিত। মাঝে মাঝে ভাইদের বাসা থেকেও খাবার আসে। অনেক সময় নিজের বাসায়ও খাবার রান্না করা হয়। বেগম জিয়া সময় সুযোগ পেলেই লন্ডনে অবস্থানরত তিন নাতনির সঙ্গে কথা বলেন। ভাইভার, ওয়াটসঅ্যাপে তাদের সঙ্গে তিনি আড্ডা দেন। সেই সময়ে বেগম জিয়ার আচরন হয়ে যায় একেবারেই শিশুর মতো।
দলীয় সুত্রগুলি বলেছে, ২৪ শে মার্চ মুক্তি লাভের পর ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয় ৮ এপ্রিল। এরপরও টানা হোম কোয়ারেন্টাইনের মতোই আছেন তিনি।সব সময়েই সতর্ক থাকেন। ভাই, ভাইবউ কিংবা বোনেরা বাসাতে আসলে তিনি পিপি, মাস্ক পরেই নিরাপদ দূরত্বে থেকে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। মুক্তিলাভের পর বাসা থেকে তিনি বের হননি এমনকি অসুস্থ সত্ত্বেও রাজধানীর কোনও হাসপাতালেও যাননি।করোনার কারণে স্থানীয় কোনও হাসপাতালের যাবার পরিকল্পনাও নেই তার।
পারিবারিক সূত্রগুলি বলেছে, জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বাসায় আসার পর নতুন সময়সূচিতে চলছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। নির্দিষ্ট আত্মীয়-স্বজন ছাড়া কারোর সঙ্গে দেখা করছেন না তিনি। এমনকি ফোনেও দলের কারোর সঙ্গে কথা বলছেন না তিনি। দলের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তিনি দেখা দেন নি। কার্যত রাজনীতি এবং দল থেকে তিনি এখন অনেক দূরে আছেন। আগে অনেক রাতে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলেও সেটি পরিবর্তন হয়ে যায় কারাবাসের সময়।এমনকি তিনি টেলিভিশন দেখাও বন্ধ করেছেন।
মুক্তির পরে নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নির্দিষ্ট সময়সূচিতে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের পরামর্শে খালেদা জিয়া এখন প্রতিদিন রাত ১১টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন। সময় মত উঠে তাহাজুদ্দের নামাজ পড়ে একটু ফলমুল খেয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেন। ভোর রাতে উঠে তাহাজুদ্দের নামাজ পড়ার অভ্যাস কারাগারে থাকাকালীন সময়েই গড়ে উঠে।
বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, বিএমএর সাবেক মহাসচিব ডাক্তার এ জেডএম জাহিদ হোসেন জানান, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। ডায়বেটিস অনিয়ন্ত্রিত, ব্যাথাও আগের মতোই আছে। সেল ফোনে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি শেষ না হলে নতুন করে কোনও ধরনের চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছে না। তাকে যে ধরনের চিকিৎসা দেয়া দরকার এই মুহূর্তে আমরা সে ধরনের চিকিৎসা দিতে পারছি না। তবে তিনি নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করেন। যখন তিনি আমাদের ডাকেন তখন আমরা উনাকে দেখতে যাই। প্রেসার মেপে, ডায়বেটিস চেক করে আসি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, পরিবারের সঙ্গে থাকায় খালেদা জিয়া মানসিকভাবে অনেকটা ‘স্বস্তিতে’ আছেন, শান্তিতে আছেন।
তিনি আরও জানান, বাসায় বসে তিনি নিয়মিতন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে খোঁজ খবর নিচ্ছেন দেশবাসীর। পাশাপাশি বিদেশেরও খবর রাখছেন।ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বোন সেলিমা ইসলাম গুলশানের বাসায় এসে নিয়মিত খালেদা জিয়াকে দেখাশুনা করে যাচ্ছেন।এর বাইরে কোনও রাজনৈতিক নেতারা বাসাতে আসেন না।বাসায় আসার অনুমতি নেই। মুক্তির পর গেলো ঈদে শুধু স্থায়ী কমিটির নেতা আর আইনজীবীরা বাসাতে এসেছিলেন। এর বাইরে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক, সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না এসে দেখা করে গিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। তাকে পুরোনো ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়।গত বছরের এপ্রিল থেকে মুক্তি লাভের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বিএসএমএমইউতে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) বন্দী অবস্থাতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

Find us on Facebook
৭ দিনের জনপ্রিয়$type=list-tab$m=0$cate=0$sn=0$rm=0$$va=0
৩০ দিনের জনপ্রিয়$type=list-tab$m=0$cate=0$sn=0$rm=0$$va=0
সর্রাধিক জনপ্রিয়$type=list-tab$m=0$cate=0$sn=0$rm=0$$va=0
সর্বশেষ আপডেট$type=blogging$l=0$c=12$m=0$s=hide$rm=0$va=0$hide=home
দৃষ্টি আকর্ষণ
অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা সরাসরি গাজীপুর অনলাইনে জানাতে ই-মেইল করুন। আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সংবাদ প্রচার করতে চাইলে
ই-মেইল করুনঃ gazipuronline@gmail.com
গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সংবাদ প্রচার করতে চাইলে
ই-মেইল করুনঃ gazipuronline@gmail.com
COMMENTS