লাখপতির গল্প: দিনে লাখ টাকারও অর্ডার পেয়েছেন ‘বেতের রানি’ সুলতানা


সুলতানা পারভীনের উদ্যোক্তা-জীবন ১০ বছর। এখন তাঁর প্রতিষ্ঠানের কারিগরসহ কর্মী ১০ জন। এমনও সময় গেছে, একদিনেই লাখ টাকার মতো পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন। বেত নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর হোম ডেকর পণ্যের প্রতিষ্ঠান ‘চিরাচরিত’ বেশ সাড়া ফেলেছে।

সম্প্রতি সুলতানা পারভীনের সঙ্গে তাঁর বেতশিল্প নিয়ে উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা-জীবন নিয়ে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। জানান, এখন তাঁর ব্যস্ততা বেতের পণ্য নিয়ে। শুরু থেকেই ভালো সাড়া পাওয়ায় কাজ করার উৎসাহ পাচ্ছেন। বেতশিল্পকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

সুলতানা পারভীন কাজ করছেন সিলেট জেলা থেকে। আর বেত পণ্য নিয়ে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) ফেসবুক গ্রুপে কাজ করছেন গত বছরের মার্চ থেকে।

সুলতানার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন শৈশব থেকে। তাঁর ভাষ্যে, ‘শুরুতে পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজ করতাম কাপড় নিয়ে। কাজ করতাম বললে ভুল হবে, এখনও কাজ করি কাপড় নিয়ে। তবে বেত পণ্য নিয়ে একটু বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ায় কাপড়ের দিকে একটু কম সময় দিতে হচ্ছে এখন। আর এই অনুপ্রেরণার প্রথমে ছিল আমার ছোট মামি। উনি এখন কানাডায় থাকেন। উনাকে আমি প্রতি স্তরে স্মরণ করি। কারণ, উনার কারণেই আমি কলেজ জীবন থেকে ক্ষুদ্রভাবে কিছু করার চেষ্টা করে আসছিলাম। বিয়ের পর আমার হাজব্যান্ডের সাপোর্ট পেয়েছি অনেক। এখনও তার সাপোর্ট পেয়ে যাচ্ছি। সেও আমার মতো ব্যবসা করতে পছন্দ করে। তাই আমার উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা পেয়েছি অনেক ছোট থেকেই, আলহামদুলিল্লাহ। তবে বেত নিয়ে কাজ করার মূল উৎসাহ পেয়েছি শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের কাছ থেকে।’

সুলতানা পারভীনের এ সাফল্যের পেছনে প্রভাবক উই-এর ফেসবুক গ্রুপ। এ গ্রুপ তাঁর পরিচিতি বাড়িয়েছে। সুলতানা পারভীন বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমাকে উই-এর জন্য এখন দেশ-বিদেশের অনেকেই চেনেন বেতের রানি হিসেবে। আমার কাজ এবং পরিচিতি আলহামদুলিল্লাহ অনেক অর্জনও এনে দিয়েছে। কিছুদিন আগে সিলেট জেলা প্রতিনিধি এবং উই গ্রুপের মডারেটর পদবি পাই প্রিয় এই গ্রুপ থেকে। আমি বলব, এই গ্রুপে রাজিব আহমেদ স্যার এবং নাসিমা আক্তার নিশা আপু, কবির-সাকিব ভাই—তাঁরা যেভাবে গ্রুপটি পরিচালনা করে চলেছেন, সেদিক থেকে আমরা অনেক সাহায্য পাচ্ছি। বেতের পণ্য দিয়ে দেশ-বিদেশের মানুষ চিনতে পেরেছে শুধু উই গ্রুপের কারণে। উই না থাকলে আমার এই অর্জন হয়তো কখনও হতো না।’


সুলতানা উই-এ কাজ করছেন শুধু বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য এবং হোম ডেকর নিয়ে। পাশাপাশি নিজের ডিজাইন করা কাপড় নিয়েও অল্পস্বল্প কাজ করে যাচ্ছেন। গত বছরের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত, অর্থাৎ ১০ মাসে শুধু উই থেকে সুলতানার পণ্য বিক্রি হয়েছে ২১ লাখ টাকার।

আর এত মানুষের আগ্রহের কারণ, সুলতানার পণ্যের মান। তাঁর দাবি, ‘যেহেতু আমি কাজ করছি ফার্নিচার জাতীয় প্রোডাক্ট নিয়ে, তাই আমি সর্বপ্রথম কাঁচামালকে প্রাধান্য দিই। কারণ, সব জায়গা থেকে এই বেত সংগ্রহ করলে ভালো থাকে না। দেখা যায়, অল্প কিছু দিনেই তা পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তবে বেতের পণ্য সব সময় খোলামেলা জায়গায় রাখলে ভালো, যেখানে আলো-বাতাস পর্যাপ্ত থাকে। তাই আমি সঠিক কাঁচামাল নির্ধারণের সঙ্গে আমার ক্রেতাদের বেত পণ্য কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়, তারও কিছু টিপস দিয়ে দিই। এতে করে খুব সহজে সবাই ব্যবহার করতে পারে অনেক দিন।’

‘আমি সব সময় আলাদা চিন্তা করতে পছন্দ করি। যেমন—বেত পণ্য নিয়ে কাজ করার শুরুতে গতানুগতিক যে ডিজাইনগুলো ছিল, তা নিয়ে আমি কাজ শুরু করিনি। কারণ, মানুষ সব সময় নতুনত্ব পছন্দ করে। তাই আমি আপেল মোড়া, ফ্লাওয়ার চেয়ার—এ ধরনের কিছু পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি, যেগুলো একটু কম পরিচিত। আমি সব সময় পণ্যের ভালো-খারাপ দিক ক্রেতাদের বলে দিই। সবাইকে হয়তো পারি না সময়ের অভাবে; কিন্তু যারা জানতে চায়, সবাইকে বলি। কাস্টমাইজড ডিজাইন এবং নিত্যনতুন হোম ডেকরের জিনিস বেত দিয়ে করায় ইদানীং সাড়া বেশি পাচ্ছি। কিছু কিছু অভিজাত রেস্টুরেন্টে খাবারের প্লেট-বাটি হিসেবেও আমার বেত পণ্য যাচ্ছে। তা ছাড়া আমার কাস্টমার সার্ভিস, কোয়ালিটি পণ্য, ডেলিভারি সিস্টেম, সেলস আফটার সার্ভিস তো আছেই,’ যোগ করেন সুলতানা।


উই-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সুলতানা। বলেন, ‘উই এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখান থেকে কাজ করতে পারলে আপনাকে পুরো বাংলাদেশ, এমনকি অন্যান্য দেশের মানুষও আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে পারবে। মূলত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য উই-এর বিকল্প নেই। নারীরা আমাদের দেশে এমনিতেই অনেক পিছিয়ে থাকে অনেক জায়গায়। কিন্তু উই-এ কাজ করার পর থেকে বুঝলাম, অনেক জায়গা থেকে নারীরা কাজ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেও মেয়েরা কাজ করছে অনেক ভালোভাবে এবং দেশ-বিদেশে তাদের পণ্য দিয়ে সুনাম অর্জন করছে। তাই আমি বলব, স্বপ্ন পূরণের জন্য উই-এর বিকল্প নেই। আর উই গ্রুপ-এর কথা বললে সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে সবার প্রিয় রাজিব আহমেদ স্যার এবং নাসিমা আক্তার নিশা আপুকে। কারণ, তাঁদের অক্লান্ত প্রচেষ্টাই আমাদের এত দূর এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। দেশীয় পণ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে এখনও তাঁরা কাজ করছেন নিরলসভাবে।’

সুলতানা পারভীনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, বেতের পণ্যকে আরও সঠিকভাবে ও নতুন রূপে তুলে ধরা, যেন বাইরের দেশে খুব ভালোভাবে চাহিদা পূরণ করতে পারেন এবং কারিগরেরা যেন তাঁদের সঠিক মূল্য পান। পাশাপাশি এই শিল্পে কর্মসংস্থান তৈরির স্বপ্ন সুলতানার।

গড়ে সুলতানার মাসে ৪৫ হাজার টাকার মতো পণ্য বিক্রি হয়। একজন উদ্যোক্তার কী কী গুণ থাকা উচিত? এনটিভি অনলাইনের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রথমে বলব, ধৈর্য। এটি প্রধান চাবিকাঠি যেকোনো ব্যবসায়ের। দ্বিতীয়টা সৃজনশীলতা, এটি ছাড়া কেউ উদ্যোক্তা হতে পারবে না। তারপর সততা। কারণ, সততা না থাকলে ব্যবসা বড় করা সম্ভব নয়। আরেকটি হলো ক্রেতাকে ফিরিয়ে না দেওয়া। কারণ, একজন অনেক আশা করে আপনার কাছে আসে। আপনি সেই পণ্যটি না দিতে পারলেও চেষ্টা করবেন যেন এর পরিপূরক কিছু থাকলে সেটা জানাতে। মাঝে মাঝে অনেকের ইমার্জেন্সি অনেক পণ্য দরকার হয়। তাই পরিপূরক পণ্যের আইডিয়া দিলে ও তা ক্রেতাদের কাজে লাগলে তাঁরা সেটা নিতে পারেন।’

সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষ করেছেন সুলতানা পারভীন। রান্না, সোশ্যাল ওয়ার্কিং, অভিনয়, কবিতা আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক আয়োজনেও ব্যাপক আগ্রহ এ উদ্যোক্তার। তাঁর মতে, সবার মেধা আছে। যাঁর যে কাজে মেধা রয়েছে, পেছনে না তাকিয়ে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে সফল হওয়া সম্ভব।

COMMENTS





নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,237,আন্তর্জাতিক,732,কাপাসিয়া,343,কালিয়াকৈর,418,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3947,চাকরির খবর,35,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2970,টঙ্গী,912,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,137,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,698,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,830,রাজনীতি,1057,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,399,শীর্ষ খবর,10783,শ্রীপুর,482,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: লাখপতির গল্প: দিনে লাখ টাকারও অর্ডার পেয়েছেন ‘বেতের রানি’ সুলতানা
লাখপতির গল্প: দিনে লাখ টাকারও অর্ডার পেয়েছেন ‘বেতের রানি’ সুলতানা
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhMghw6XxgKLjOew1FRVAouNQlmOhvnfCr5hPHAYxejppx6m_SsoOjRWeh2nCk34JHWIUkvi2qUWiu4ylfPXlgCA86JkxA8JPUcby0IQiwaNBHpvNgM0V5Zlt2qyigBglvnWc3etUs45k0/w640-h360/sultana_cover.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhMghw6XxgKLjOew1FRVAouNQlmOhvnfCr5hPHAYxejppx6m_SsoOjRWeh2nCk34JHWIUkvi2qUWiu4ylfPXlgCA86JkxA8JPUcby0IQiwaNBHpvNgM0V5Zlt2qyigBglvnWc3etUs45k0/s72-w640-c-h360/sultana_cover.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2021/02/sultana.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2021/02/sultana.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy