গাজীপুর অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ঝড়ের কাছে ‘মোদি ম্যাজিক’ পরাজিত হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির বাঘা বাঘা নেতা পশ্চিমবঙ্গ চষে বেড়িয়ে সাম্প্রদায়িকতার কার্ড খেলতে চেয়েছিলেন। তবে বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার ওই টোপ গেলেনি পশ্চিমবঙ্গবাসী। গেরুয়া শিবিরের ‘পদ্মফুলের’ পরিবর্তে মমতার ঘাসফুলেই আস্থা রেখেছে তারা। ফলে পশ্চিমবঙ্গে হ্যাটট্রিক সরকার গড়ছেন মমতা ব্যানার্জী। তবে গত বিধানসভার চেয়ে এবার বহু আসন বেশি পেয়েছে গেরুয়া শিবির। অপরদিকে বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফ জোটের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজার অনলাইনের।
তৃণমূলের জয়ের পর রবিবার সন্ধ্যায় মমতা প্রথমে রাজ্যবাসীকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, এবার আমাদের প্রথম কাজ হবে করোনা মোকাবেলা করা। মমতা তার কালীঘাটের দফতর থেকে বলেন, রাজ্যবাসীর আশীর্বাদেই তৃণমূল এবার বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে। এ জয় বাংলার জয়, বাংলার মানুষের জয়। এই জয় ভারতবর্ষের মানুষকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এরপর তিনি বলেন, ‘এবার সত্যিই খেলা হয়েছে। আর সেই খেলায় আমরা জিতেছি। তাই আমি গ্রামের বিভিন্ন ক্লাবকে ৫০ হাজার ফুটবল উপহার দেব। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিনা মূল্যে টিকা চাইব। না দিলে আন্দোলনে নামব।’ তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে এখন বিজয় উৎসব নয়। করোনা গেলে আমরা কলকাতার ব্রিগেডে বিজয় উৎসব করব।
রবিবার রাতে প্রকাশিত নির্বাচনের সর্বশেষ ফলাফলে তৃণমূল কংগ্রেস-২১৪ ও বিজেপি ৭৪ আসনে এগিয়েছিল। বাম-কংগ্রেস জোট একটি ও অন্যান্য দল একটি আসনে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মোট ২৯৪ আসন। প্রার্থীর মৃত্যুতে দুটি আসনে ভোট হয়নি। এ রাজ্যে সরকার গড়তে দরকার ১৪৮ আসন। এ নির্বাচনে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা নন্দীগ্রামে প্রথমে মমতা ব্যানার্জীর জয়ের খবর দেয়া হলেও পরে বিজেপির শুভেন্দু জয়ী হন। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ আনন্দবাজার অনলাইনের খবরে বলা হয়, নন্দীগ্রামে শুভেন্দু পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৬৭৩ ভোট। মমতা ব্যানার্জী পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৯৩৭ ভোট। মমতা ব্যানার্জী নিজ আসনে পরাজিত হলেও তার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথে বাধা নেই। কারণ ভারতীয় সংবিধানে বলা আছে, বিধানসভার সদস্য না হয়েও কেন কেউ যদি মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন তাহলে তাকে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হয়। আবার কেউ যদি নির্বাচনে হেরে মুখ্যমন্ত্রী হতে চান তাহলে তার দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে। এরপর নিজ দলের নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হতে হবে। ক্ষমতাগ্রহণের ১৮০ দিনের মধ্যে তাকে কোন একটি আসন থেকে জিতে আসতে হবে। এরপরও পরাজিত হলে তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হবে।
২০১১ সালে মমতার পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ক্ষমতায় আসতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল নন্দীগ্রাম। সে সময়কার মমতার প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী এবার ছিলেন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া সেই শুভেন্দুর কাছে হারলেন তিনি।
তৃণমূল কংগ্রেসের বিশাল জয়ে মমতা ব্যানার্জীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উত্তর প্রদেশের নেতা অখিলেশ যাদব, শারদ পাওয়ার ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। এক টুইট বার্তায় মোদি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে জয়ী হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন মমতা দিদি। কোভিড মোকাবেলায় পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে সবরকমের সহযোগিতা করবে কেন্দ্রীয় সরকার।
‘এবার, ২০০ পার’ স্লোগান নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিজেপি। তবে নির্বাচনে ভোট গণনার প্রাথমিক ফলাফলে সেই স্লোগানের বদলে বিজেপি কার্যত অনেক কম আসন পাচ্ছে। এ পরিস্থিতির জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তথা নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের দিকে আঙ্গুল তোলা শুরু করেছেন বিজেপির রাজ্য নেতাদের একাংশ।
নির্দিষ্ট করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম করে আঙ্গুল না তুললেও বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতাদের ইঙ্গিত স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এক শীর্ষ নেতার ভাষায়, সেনাপতি হয়েছিলেন যারা, জিতলে তারা কৃতিত্ব নিতেন। এখন হারের দায়ও তাদের নিতে হবে।
প্রথম থেকেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব রাজ্যের হাত থেকে নিয়ে নেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কোন্ এলাকায় দল কেমন অবস্থায় রয়েছে তা দেখতে ৫ কেন্দ্রীয় নেতার হাতে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর কী না করেছে বিজেপি। ২৯৪টি আসনে আলাদা আলাদা কর্মসূচী ছিল তাদের।
কৃষক সুরক্ষা যাত্রা থেকে কৃষকদের সঙ্গে ‘একসঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার’ মতো কর্মসূচীর পর কর্মসূচী পরিচালনা করেছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এসব কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে রাজ্যে সাংগঠনিক কাজে জোর দেয়া যায়নি বলে সেই সময়েই বিজেপির অনেক নেতা অভিযোগ তুলেছিলেন। তারা বলেছিলেন, আমরা জিতলে রাজ্যের সংগঠনের জোরেই জিতব। আর হারলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডের জন্য।
এ নির্বাচনে কার্যত সিপিএম-কংগ্রেস-আইএসএফের ভরাডুবি হয়েছে। ভোটের ফলের প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম সাড়ে তিন শতাংশ ও কংগ্রেস আড়াই শতাংশ ভোট পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এ প্রবণতা বজায় থাকলে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে সিপিএম-কংগ্রেস।
প্রথম দফায় গত ২৭ মার্চ ৩০, দ্বিতীয় দফায় ১ এপ্রিল ৩০, তৃতীয় দফায় ৬ এপ্রিল ৩১, চতুর্থ দফায় ১০ এপ্রিল ৪৪, পঞ্চম দফায় ১৭ এপ্রিল ৪৫, ষষ্ঠ দফায় ২২ এপ্রিল ৪৩ ও সপ্তম দফায় ২৬ এপ্রিল ৩৪ আসনে ভোট নেয়া হয়। তবে দুই প্রার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় সপ্তম দফায় ৩৬ আসনের পরিবর্তে ৩৪ আসনে ভোট নেয়া হয়। ভোটগ্রহণের দিনগুলোতে নির্বাচনে কমিশন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।
অসম ও পদুচেরিতে বিজেপি জয়ী, কেরল ও তামিলনাড়ুতে শূন্য ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও তিন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত একটি অঞ্চলের নির্বাচনের ফল রবিবার প্রকাশিত হয়েছে। এ রাজ্যগুলো হলো অসম, কেরল ও তামিলনাড়ু। আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পদুচেরি। ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ হিসাবে বলা হয়েছে, অসম ও পদুচেরিতে ফের সরকার গড়তে যাচ্ছে বিজেপি। তবে তামিলনাড়ু ও কেরলে কোন আসন পায়নি বিজেপি। অসমে বিজেপি, ৭৬ ও কংগ্রেস ৪৮ আসন পেয়েছে। পদুচেরিতে কংগ্রেস জোট ২ ও বিজেপি জোট ১৮ আসন। অপরদিকে তামিলনাড়ুতে ডিএমকে ১৫৩ ও এডিএমকে ৮০ আসন এবং কেরলে এলডিএফ ৯৯ ও ইউডিএফ ৪১ আসন পেয়েছে।

Find us on Facebook
৭ দিনের জনপ্রিয়$type=list-tab$m=0$cate=0$sn=0$rm=0$$va=0
৩০ দিনের জনপ্রিয়$type=list-tab$m=0$cate=0$sn=0$rm=0$$va=0
সর্রাধিক জনপ্রিয়$type=list-tab$m=0$cate=0$sn=0$rm=0$$va=0
সর্বশেষ আপডেট$type=blogging$l=0$c=12$m=0$s=hide$rm=0$va=0$hide=home
দৃষ্টি আকর্ষণ
অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা সরাসরি গাজীপুর অনলাইনে জানাতে ই-মেইল করুন। আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সংবাদ প্রচার করতে চাইলে
ই-মেইল করুনঃ gazipuronline@gmail.com
গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সংবাদ প্রচার করতে চাইলে
ই-মেইল করুনঃ gazipuronline@gmail.com
COMMENTS