এক সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার। পিচ্চি হেলাল কারাগারে থাকলেও সেখান থেকে প্রায়ই কথা বলতেন পিয়াসার সঙ্গে। শোবিজ জগতের তরুণী এবং ব্যবসায়ীদের তথ্য জানতে চাইতেন, শোবিজ জগৎ সম্পর্কে আপডেট নিতেন।
এছাড়া, হেলালের সহযোগীদের সঙ্গেও পিয়াসার যোগাযোগ ছিল। তারাই মূলত পিয়াসার পার্টিতে আসা বিশিষ্টজনদের ভিডিও ধারণ করে পরে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। এসব নির্দেশনা হেলাল দিতেন কি না, সে বিষয়ে জানতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পিচ্চি হেলাল এক সময় ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকা দাপিয়ে বেড়াতেন, চালাতেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বর্তমানে তিনি রয়েছেন কাশিমপুর-১ কারাগারে। অভিযোগ রয়েছে, এখনো কারাগারে বসেই কারাগারের বাইরে চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মোহাম্মদ মাসুদুল ইসলাম জিসান ও শরিফুল ইসলাম মিশুকে গ্রেফতার করা হয়। দুজনই পিচ্চি হেলালের সহযোগী। তবে তারা হেলালের নির্দেশে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল করতেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জিসানের আইফোন-১১ প্রো মোবাইল ফোনে প্রায় শতাধিক অশ্লীল ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে। অভিযানে যখন ফোনটি জব্দ করা হয়, তখন সেটি লক করা ছিল। এরপর ‘৬৫৫৫৯২’ পাসওয়ার্ড দিয়ে লক খুলে ফোনের ‘ফটো ভল্ট’ নামে একটি ফোল্ডারে প্রবেশ করে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও দেখতে পায় আইনশৃংখলা বাহিনী।
এছাড়া, শরিফুলের কাছে থাকা আইফোন ১২-প্রো মোবাইলটি ফোনটিও লক ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘১১১১’ পাসওয়ার্ড দিয়ে লক খুলে ফোনের ‘ফটোস’ ফোল্ডারে প্রবেশ করে শতাধিক ছবি ও ভিডিও দেখতে পায়।
তারা পুলিশকে জানান, পিয়াসার পার্টিতে গিয়েই এসব ভিডিও করা হতো। আগে থেকেই তারা জানতেন কোনদিন কারা আসবেন। এছাড়া পিয়াসাকে তারা মাদকও সরবরাহ করতেন। আবার কখনো কখনো তারাও পিয়াসার বাসায় গিয়ে মাদক সেবন করতেন।
পিয়াসার মামলার তদন্ত কালে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পিয়াসা, জিসান ও মিশুকে একত্রে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানে পিয়াসা ডিজে পার্টিতে অশ্লীলতা ও মাদক সেবনের বিষয়টি স্বীকার করলেও এসব যে ভিডিও হচ্ছে, তা জানতেন না বলে দাবি করেন।
সূত্র জানায়, পিয়াসার বাসায় আয়োজিত প্রতিটি পার্টিতে যেতেন পিচ্চি হেলালের সহযোগী জিসান ও মিশু। পিচ্চি হেলালের সঙ্গে তার দুই সহযোগী ও পিয়াসার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে হেলাল তাদের ভিআইপিদের ভিডিও ধারণের নির্দেশনা দিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
পিয়াসা, জিসান ও মিশু মাদক মামলায় বর্তমানে সিআইডিতে রিমান্ডে রয়েছেন। মাদকের উৎস খোঁজার পাশাপাশি তাদেরকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, আমরা তাদের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে কিছু আলামত ও ডিভাইস উদ্ধার করেছি। ল্যাপটপ, ডেস্কটপ পাসপোর্ট, মোবাইল, হার্ডডিস্ক ও গাড়ি জব্দ করেছি।
তিনি বলেন, তদন্তের এ পর্যায়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে এ মুহূর্তে তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের প্রতারণা, অনৈতিক কার্যক্রম ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মতো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নানা পেশার অনেকের নাম আমরা জেনেছি। এসব যাচাই-বাছাই করছি। যাদের নাম এসেছে, সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
COMMENTS