গাজীপুরে তীব্র গ্যাস সংকটে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমে অর্ধেকে নেমেছে। গ্যাসের অভাবে শিল্প কারখানাগুলো ধুঁকছে। গত কয়েক দিন গ্যাসের অভাবে কারখানাগুলো একপ্রকার বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ঈদে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করা কারখানাগুলোর জন্য দুরূহ হবে।
শিল্পখাতে গ্যাস ব্যবহারের সিংহভাগ করে থাকে টেক্সটাইল মিলগুলো। শুধু টেক্সটাইল মিল নয়, বিভিন্ন সিরামিক কারখানা, তৈরি পোশাক শিল্প, ওয়াশিং এবং ডায়িং কারখানাও গ্যাস সংকটে ভুগছে। গ্যাসের স্বল্প চাপের কারণে এসব কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রপ্তানি আয়েও প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বাঘের বাজার এলাকায় ইশরাক স্পিনিং মিল এবং মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলের উদ্যোক্তারা আজ মঙ্গলবার সকালে জানান, দুটি কারখানাই গ্যাসের চাপ না থাকায় আজ বন্ধ রয়েছে। কারখানা দুটিতে আজ সকাল ৮টার পর থেকে শূন্য পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ারিংস-প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে গ্যাসের চাপের ইউনিট) গ্যাসের চাপ। যে কারণে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গাজীপুরে গ্যাস ব্যবহৃত হয় এমন অধিকাংশ কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো কারখানা বিকল্প ব্যবস্থায় সিলিন্ডারের মাধ্যমে কিছুটা সচল রয়েছে।
রাজধানীর আশপাশের বেশ কয়েকটি টেক্সটাইল মিল পরিদর্শনকালে দেখা যায়, কোনো কারখানাতেই গ্যাসের পর্যাপ্ত পিএসআই নেই। বাধ্য হয়ে তারা গ্যাস লাইনের সুইচ বন্ধ রেখেছেন। ইশরাক স্পিনিং মিলে পিএসআই শূন্য দেখা গেছে। মোশাররফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলের চিত্রও একই।
মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিটিএমএ’র পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন জানান, কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গ্যাসের চাপ কমপক্ষে ১৫ পিএসআই থাকা প্রয়োজন হয়। সেখানে গত ছয় মাস কখনোই ৫ পিএসআইর ওপরে ছিল না। মাঝে মাঝে গ্যাসের চাপ শূন্যে নেমে আসছে, তখন বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর শিল্পবান্ধব উদ্যোগের কারণে করোনাকালেও দেশের কারখানাগুলোতে উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু গত ছয় মাস যাবত গ্যাস সরবরাহে মারাত্মক ঘাটতির কারণে তাদের প্রতি মাসে লোকসান গুণতে হচ্ছে। তার কারখানায় শ্রমিক কর্মচারী আট হাজার। একদিন কারখানা বন্ধ থাকলে কমপক্ষে এক কোটি টাকা লোকসান হয়। অপরদিকে লেট শিপমেন্টের কারণে বিদেশি ক্রেতা ডিসকাউন্ট দাবি করে। আবার লেট শিপমেন্ট ব্যাকআপ দিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এয়ার শিপমেন্ট করা হয়। তখন শিপমেন্ট খরচ তিনগুন বেশি গুনতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন গ্যাসের সমস্যা থেকে এর কিছু কারণও তিনি চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, গাজীপুরের ধনুয়া থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুইপাশে হাজারের ওপর কারখানা। এ অঞ্চলে তিতাসের সঞ্চালন ধনুয়া থেকে শুরু। সঞ্চালন লাইনের প্রথমদিকে কারখানাগুলো গ্যাসের চাপ বেশি পাচ্ছে। যতই দূরে যায় ততই কমতে থাকে। আর সঞ্চালন লাইনের শেষ দিকে যেসব কারখানা সেখানে নিয়মিতই গ্যাসের চাপ কম হয়। এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
টঙ্গী বিসিক এলাকার একজন উদ্যোক্তা জানান, তার ডায়িং কারখানায় গ্যাসের চাপ কম থাকার কারণে ব্যাকআপ হিসেবে সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। সেক্ষেত্রে প্রতি কিউবিক মিটার গ্যাসের দাম পরে ৫৫ টাকা। যেখানে তিতাসের এক কিউবিক মিটার গ্যাসের দাম সাড়ে ১৩ টাকা। এতে উৎপাদন খরচ চারগুন বেড়ে যাচ্ছে।
বিটিএমএর সহসভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, শিল্প কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিটিএমএর পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত দাবি জানিয়ে আসছেন। সমস্যা সমাধানে আশ্বাস পেলেও বাস্তব পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। তিনি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানান।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জয়দেবপুর জোনের ব্যবস্থাপক নিপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, কমবেশী সমস্যা আছে। তবে শূন্য পিএসআই চাপ কেন, এ বিষয়টি তিনি অবগত নন।
COMMENTS