শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে সারা দেশে নেতাকর্মীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের দলে ফেরার পথ সুগম হয়েছে। দলের জাতীয় সম্মেলনের পর চিঠি দেওয়া শুরু হতে পারে। সেই হিসেবে দল থেকে জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। দলে ফিরে আসার বিষয়টি আলোচনার মধ্যেই জাহাঙ্গীর মেয়র পদ ফিরে পেতে পারেন, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
গত বুধবার গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরের মেয়র পদে পুনর্বহালের বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মেয়র পদে ফেরার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। তাকে তো মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বরখাস্ত যেসব কারণে করা হয়েছে, সেগুলোর সমাধান প্রক্রিয়াধীন।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-২) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক কাজ শুরু করব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীরকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে—এমন খবর এখন নগরবাসীর মুখে মুখে। দলে ফেরার গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ায় শিগগিরই তিনি মেয়রের আসন ফিরে পাবেন, এমন প্রত্যাশা তার সমর্থকদের।
কবে নাগাদ তিনি মেয়র পদে ফিরবেন, তা নির্ভর করছে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর। গত ২৩ আগস্ট গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এর আগে বহিষ্কারাদেশের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাহাঙ্গীর রিট করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, আইন সচিব, গাজীপুরের জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে সময় বেঁধে দেন।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত জানার পর জাহাঙ্গীর তার মেয়র পদ ফিরে পেতে আইনি প্রক্রিয়া জোরদার করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এ বিষয়ে তিনি আইনি পদক্ষেপসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দল আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে। এখন মানুষ চায়, নির্বাচিত প্রতিনিধি যাকে তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে; তিনি দায়িত্ব পালন করুক। আমি আশাবাদী দ্রুত এ ব্যাপারে ভালো সিদ্ধান্ত আসবে। আমি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতা চাই। তার মাধ্যমে এ নগরী পরিকল্পিত, ক্লিন সিটি গড়তে চাই। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী যেটা ভালো মনে করেন, এখানে তাই হবে।
গত ১৭ ডিসেম্বরের দলটির জাতীয় কমিটির সভা সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় মেয়র জাহাঙ্গীরকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। দল থেকে বহিষ্কারের পর ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রাণালয়।
এর আগে ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। চার মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর। গাজীপুরের পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রথমে মেয়রকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর তাকে সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষমতাসীন দল। সে সময় জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলেও দল তাকে শাস্তি দেয়। পরে ১৭ ডিসেম্বরের জাতীয় কমিটির সভার আগে আবারও ক্ষমার আবেদন করেন জাহাঙ্গীর। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি দলে ফিরতে যাচ্ছেন।
মাত্র ৩৯ বছর বয়সে গাজীপুরের মেয়র হন জাহাঙ্গীর। তিনি ছাত্রলীগ গাজীপুর জেলা শাখার সহসভাপতি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, সহসম্পাদক ও সহসভাপতি ছিলেন। তিনি গাজীপুর সদর ও টঙ্গী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০১৮ সালের ২৬ জুনের নির্বাচনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। ২৬ জুলাই মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বহিষ্কারের আগ পর্যন্ত ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। এর আগেই মেয়র নির্বাচন হতে পারে। সে নির্বাচনে জাহাঙ্গীরকে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
COMMENTS