আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলম কবে ফিরছেন তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, দলে ফেরানোর পাশাপাশি খুব শিগগিরই সিটি করপোরেশনকে ভারমুক্ত করা হবে, যার ইঙ্গিত এরই মধ্যে দিয়েছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ছয়দানা এলাকায় গাজীপুরের মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শত শত নেতাকর্মীর ভিড়। কেউ বাসার দোতলায়, কেউ নিচতলায়, কেউবা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে। বাসার সামনে দলীয় নেতাকর্মীর বাইরে সাধারণ মানুষও রয়েছে। এ সময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতেও দেখা যায়।
সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম তিতুমীর। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। তিনি (জাহাঙ্গীর আলম) বহিষ্কার হওয়ার পর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ ঝিমিয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগে সম্মেলন হলেও তেমন কোনো আনন্দ উল্লাস ছিল না। আশা করা হচ্ছে, ফের মহনগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন সরব হয়ে উঠবে।’
গাজীপুর মহানগর টঙ্গী পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এম এম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিয়ে চলছে সিটি করপোরেশন। দল থেকে বহিষ্কার থাকায় মেয়র পদে ফিরতে পারেনি কিন্তু এখন দল তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। এতে মহানগরীর নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। আমরা আশা করছি, দ্রুতই দলীয় পদ এবং মেয়র পদেও ফিরছেন তিনি। এজন্য প্রতিদিন মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মেয়রের বাসার সামনে ভিড় করছেন।’
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। পরে ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এরপর স্থানীয় রাজনীতিতে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর আলম। তার বাড়িতে ভিড় করা নেতাকর্মীর সংখ্যা কমতে থাকে। দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন একসময়ের ঘনিষ্ঠরা।
গেল শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) তিনি বলেন, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে পাপে তারা সাজা পেয়েছেন, তার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে না-এই শর্ত দিয়েই তারা ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।
একদিন পরই (২১ ডিসেম্বর) জাহাঙ্গীর আলমের মেয়র পদে ফেরা নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলমের মেয়র পদে ফেরার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাকে তো মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বরখাস্ত যেসব কারণে করা হয়েছে, সেগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের প্রসঙ্গে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন, ‘টিভি পত্রিকায় দেখছি কিন্তু আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠিপত্র পাইনি। চিঠি পেলে অবশ্যই তাকে সাদরে গ্রহণ করব। এর কোনো বিকল্প নেই।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি যদি তাকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তবে আমাদেরও কোনো সমস্যা নেই। দলীয় নির্দেশ মোতাবেক আমরা কাজ করব।’
রাজনীতি ও সিটি মেয়রের পদ নিয়ে কী ভাবছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘দল থেকে ক্ষমা করেছে, এ জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। এখন গাজীপুরের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদদের সঙ্গে আলোচনা করে দল ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’
COMMENTS