গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত থাকা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে তার পদে পুনর্বহাল করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন এ সিটি করপোরেশনের ৬১ জন কাউন্সিলর।
রোববার (১৪ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে এ চিঠি জমা দেওয়া হয়।
গত ১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত জাহাঙ্গীরকে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার জন্য এর আগে আপনাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার/অব্যাহতি প্রদান করা হয়।’
‘আপনার বিরুদ্ধে আনিত সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ স্বীকার করে আপনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।’
‘এ অবস্থায়, গত ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১৭(৬) এবং ৪৭(২) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করে আপনার প্রেরিত লিখিত আবেদন পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে আপনার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হলো।’
‘ভবিষ্যতে কোনো প্রকার সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে, তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।’
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির সভায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে অব্যাহতিপ্রাপ্তদের ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক দলের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠিতে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচিত মেয়র নগরীর কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। কিন্তু বিগত ১৫ মাসে প্যানেল মেয়রের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতা চরম পর্যায়ে পৌছেছে। যার কারণে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সিটি কর্পোরেশনে উন্নয়নের যে ধারা চালু করেছিলেন বর্তমান প্যানেল মেয়রের সমন্বয়হীনতা ও জনগণের চেয়ে নিজের উন্নয়নে অধিক মনোযোগী হওয়ার কারণে আজ তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এর কারণে লাখ লাখ সাধারণ জনগণ সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রাপ্য নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কার্যত সিটি কর্পোরেশন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এতে সরকার ও দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে হাইকোর্ট প্যানেল মেয়রের (আসাদুর রহমান কিরণ) বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, দ্বৈত নাগরিকতাসহ ২১টি বিষয়ে রিট দায়ের হয়েছে। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট দুদদকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এমতাবস্থায় কাউন্সিলররা নগরীর উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে জাহাঙ্গীরকে মেয়রের দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই অডিওতে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করতে শোনা যায় জাহাঙ্গীর আলমকে। এ ঘটনায় ওই বছরের ১৯ নভেম্বর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বেশকিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ নভেম্বর তাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
COMMENTS